(ইসলাম গ্রহণের কারণে হীরাকে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই- এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার। শেষ পর্ব
(ইসলাম গ্রহণের কারণে হীরাকে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই- এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার। শেষ পর্ব
বর্তমানে আমি আমার মনের সান্তনার জন্য এবং মজলুমের অন্তর্কে জাগাবার জন্য বিপদগ্রস্ত নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলমানদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতার চেষ্টা করি। এটা আমার জানা আছে যে, মৃত্যু ও জীবন দেয়ার আমি কে? কিন্তু চেষ্টাকারী তো সম্পাদনকারীর মতই তাই চেষ্টা করি।
গুজরাটের দাঙ্গা হলো। আমি সেই সময়টাকে গণিমত মনে করলাম। আমার আল্লাহর মেহেরবানী যে, তিনি আমাকে খুব সুযোগ করে দিয়েছেন।
সেখানে আমি হিন্দু সেজে অনেক মুসলমানকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। অথবা পূর্ব থেকে আশঙ্কা থাকলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছি। প্রথমে গিয়ে হিন্দুদের পরামর্শে শরিক হয়েছি। এভাবে ১০-১১টি হামলার পূর্বেই খবর দিয়ে তাদের গ্রাম থেকে পালাতে সহযোগিতা করেছি। এ কাজ তো আমার আল্লাহ্ এমন করিয়েছেন যা আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়েছে। আপনি হয়তো শুনেছেন যে, ভাউনগরে এক মাদরাসার ৪০০ ছাত্রকে আগুনে জ্বালিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা ছিলো। আমি সেখানে থানা ইনচার্জ মি.শর্মাকে খবর দিলাম এবং তাদেরকে প্রস্তুত করলাম। সেই দলটি আসার ১০ মিনিট পূর্বে পিছন দিক থেকে নিজ হাতে দেয়ালটি ভেঙে দিলাম। আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে ৪০০ নিষ্পাপ শিশুর জান বাঁচানোর উছিলা বানিয়ে দিলেন।
আমি তিন মাস পর্যন্ত গুজরাটে অবস্থান করি। তারপরও আমার জুলুম এত বেশি যে, এই সব কিছু তার সমপর্যায়ের নয়। একবার মাওলানা সাহেব শান্তনা দিয়েছিলেন যে, আল্লাহ্ তা’আলার রহমতের জন্য অসুবিধা কী? মৃত্যুর সময় বিভিন্ন বাহানা করে দেন। যেই আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে হেদায়েত দান করেছেন, সেই আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করতে কেন সক্ষম নন? এর দ্বারা কিছুটা চিন্তামুক্ত হই। মাওলানা সাহেব আমাকে ইসলাম শেখার জন্য তাবলীগে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। আমি দু’মাসের সময় নিলাম এবং গ্রামের বাড়ি-ঘর জমি-জমা সস্তা দামে বিক্রি করে দিল্লীতে বাসা নিলাম। আমার স্ত্রী ও দুই ভাতিজা ও হিরার বোনকে প্রস্তুত করে ফুলাতে নিয়ে কালেমা পড়ালাম। এতে আমার দুই মাসের স্থানে এক বছর লেগে গেলো। তারপর জামা’য়াতে সময় লাগালাম। সর্বদা আমার অন্তর এই চিন্তায় ডুবে থাকতো যে, এতগুলো মুসলমান এবং ফুলের মতো শিশুদের হত্যাকারী কিভাবে ক্ষমার উপযুক্ত হতে পারে? মাওলানা সাহেব আমাকে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতে বলেছেন। বিশেষ করে সূরা বুরুজ বেশি বেশি পাঠ করতে বলেছেন। এখন আমার সেই সূরাটি অর্থসহ বেশ মুখস্থ আছে। যেমন ১৪০০ বছর আগে আমার আল্লাহ্ তা’আলা কেমন সত্য কথা বলেছেন! আমার মনে হয় যে, অদৃশ্যের প্রজ্ঞাময় জ্ঞানী এতে আমারই ছবি এঁকেছেন।
قبل أصحب الأخْدُودِ النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ إِنَّهُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ وَهُمْ عَلَى مَا ييَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ
অর্থ: ‘অভিশপ্ত হয়েছে গর্তওয়ালারা। অনেক ইন্ধনের অগ্নিসংযোগকারীরা; যখন উহারা ইহার পাশে উপবিষ্ট ছিল। এবং উহারা মু’মিনদিগের সহিত যাহা করিতেছিল তাহা প্রত্যক্ষ করিতেছিল।-সূরা বুরুজ-৪-৭
আহমদ ভাই! আপনি এই সূরাটি পড়ুন এবং হিরার কম্পন সৃষ্টিকারী আওয়াজের দিকে একটু লক্ষ্য করুন! (হে আল্লাহ্! আপনি কি আমাকে দেখছেন না? আমার আল্লাহ্। আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না? হে আল্লাহ্! আপনি আপনার হিরাকেও অনেক ভালবাসেন না। হেরা গুহা থেকেও আমাকে ভালোবাসেন তাই না। আপনার ভালোবাসার পর আর কারো ভালবাসার প্রয়োজন নেই। আব্বু! অবশ্যই ইসলাম গ্রহণ করবেন। চাচাজী, অবশ্যই মুসলমান হয়ে যাবেন।
আমার জন্য দু’আ করবেন। আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন এবং আমার দ্বারা এমন কাজ নেন যার দ্বারা আমার মতো জালেমের অন্তর তৃপ্ত হয়ে যায়। বাস্তবেই কুরআনের এই ফরমানের মধ্যে আমার মতো চিকিৎসাহীন রোগীর অনেক বড় চিকিৎসা রয়েছে। যা ভালো খারাপের মাঝে পার্থক্য করে দেয়। গুজরাটের দাঙ্গায় কিছু নিষ্পাপ মুসলমানের সাহায্য ও জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করতে পেরেছি ভেবে আমার দিল খুব শান্তি পায়। খোদা হাফেজ।