(ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘হিরা’কে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার পর্ব-২
(ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘হিরা’কে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার পর্ব-২
বাস্তবেই আমার ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা প্রত্যেক হতাশ মানুষের জন্য আশার আলো বয়ে আনবে। ঐ দয়াময় আল্লাহ তা’আলা যখন আমার মতো অত্যাচারীর উপর এমন দয়া করতে পেরেছেন তাহলে অন্যদের নিরাশ হওয়ার অবকাশ কোথায়?
আমার একজন বড় ভাই ছিলেন। এত অত্যাচার ও অপরাধের পরও দু’ভাইয়ের মধ্যে অন্তহীন ভালোবাসা ছিলো। আমার ভাইয়ের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে ছিলো। আমার কোন সন্তান নেই। ভাইয়ের বড় মেয়ের নাম ছিল হিরা। সে ছিল অভিনব উন্মাদিনী মেয়ে। অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ছিলো। সে যার সাথে মিশতো, পাগলের মত মিশতো। যার সাথে শত্রুতা করতো পাগলের মতই শত্রুতা করতো। কখনো কখনো আমাদের মনে হতো যে, তার ওপর কোন জ্বীন-পরীর আছর আছে। কয়েকজন বড় কবিরাজকেও দেখানো হয়েছে কিন্তু তার অবস্থা যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেল।
সে স্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলো। বড় হয়ে যাওয়ায় তাকে ঘরের কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়। তার আরও লেখাপড়া করার ইচ্ছা ছিলো। সে কারো অনুমতি ছাড়াই হাই স্কুলের ফরম পূরণ করে। আট দিন পর্যন্ত মানুষের বাড়িতে কাজ করে ফিস জমায় এবং এর দ্বারা বই-খাতা ক্রয় করে। যখন তাঁর পড়া বুঝে না আসতো তখন পড়া বুঝার জন্য পাশের বাড়ির ব্রাহ্মণের মেয়ের কাছে যেতো। ব্রাহ্মণের এক ছেলে ছিলো সন্ত্রাসী। জানি না আমার ভাতিজী হিরাকে সে কিভাবে পটিয়েছে। একদিন রাতে সে হিরাকে ভাগিয়ে বারুতের পাশে এক জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তার গ্রুপের সদস্যরা থাকতো। হিরা তো তার সাথে চলে গেছে কিন্তু সেখানে গিয়ে তার পিতা-মাতার কথা খুব মনে পড়ে এবং সে তার ভুলের উপর অনুতপ্ত হয়। সে চুপে চুপে কাঁদতো।
সেই দলে ছিল ইদ্রীসপুরের এক মুসলমান ছেলে। একদিন সে হিরাকে কাঁদতে দেখে তার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে সে উত্তরে বলল, আমি অল্প বয়সী মেয়ে। কিছু বুঝতে না পেরে এই ছেলের সাথে চলে এসেছি। কিন্তু আমার মান-সম্মানের ভয় হচ্ছে এবং আমার পিতা-মাতার কথা খুব মনে পড়ছে। হিরার প্রতি ঐ ছেলের দয়া হলো এবং সে বললো, আমি মুসলমান। আর মুসলমান তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। আমি তোমাকে আমার বোন বানাচ্ছি।
আমি তোমার ইজ্জত হেফাজত করবো এবং তোমাকে এই জঙ্গল থেকে বের করে নিরাপদে তোমার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো। সে তার বন্ধুদেরকে বললো, এই মেয়েটিকে খুব সাহসী এবং পাক্কা মনে হচ্ছে। আর আমাদের দলে দু’একটি মেয়েও দরকার, প্রায়ই প্রয়োজন পড়ে। এখন তাকে আমাদের সাথে রাখার উপায় এই হতে পারে যে, তাকে পুরুষের কাপড় পরিধান করানো হোক। বন্ধুরা তার কথা মেনে নিলো। হিরাকে পুরুষের কাপড় পরিয়ে পুরুষ বানিয়ে দেয়া হলো এবং সে তাকে সাথে নিয়ে ঘুরাফেরা করতে লাগলো।
হিরা দেখতে পেলো ১০-১২ জন মানুষের মধ্যে সেই মুসলমান ছেলেটির আচার-ব্যবহার অন্যদের থেকে পৃথক। সে কথায় পাকা ছিলো এবং মানুষকে ভালো পরামর্শ দিতো। যখন মাল বণ্টন হতো তখন গরীবদের জন্য একটি অংশ রেখে দিতো। হীরাকে পৃথক কামরায় শোয়ানোর ব্যবস্থা করতো এবং রাতে পাহারা দিতো যে, কোন হিন্দু এদিকে আসে কি- না। যখন কিছুদিন হিরাকে তার সাথে থাকতে দেখলো তখন তাদের বিশ্বাস হয়ে গেলো যে, সে তাদের দলের সদস্য হয়ে গেছে, তাই তার সাথে পাহারা কমিয়ে দেয়া হলো।
একদিন সে হিরাকে কোন বাহানায় তার বাড়ি বারুতে পাঠিয়ে দিলো এবং হিরাকে বললো যে, তুমি সেখানে গিয়ে গাড়িতে উঠে আমাদের বাড়ি ইদ্রীসপুর চলে যাবে এবং সেখানে গিয়ে আমার ছোট ভাইকে সব কথা বলবে। তাকে বলবে যে, তোমার ভাই তোমাকে যেতে বলেছে। আর বলবে সে যেন এখানে এসে বলে যে, সেই মেয়েকে বারুতওয়ালারা সন্দেহবশত পুলিশের হাতে উঠিয়ে দিয়েছে। হিরা এমনই করলো এবং তার ভাই জঙ্গলে এসে বললো, সেই মেয়েকে বারুত ওয়ালারা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। সে তার ভাইকে বলে দিলো, হিরাকে থানায় পাঠিয়ে দাও এবং সেখানে গিয়ে সে বলবে যে, ডাকাতদের একটি দল আমাকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছে। আমি কোন রকম পালিয়ে এসেছি। আমার জীবনের ব্যাপারে ভয় হচ্ছে। হিরা এমনই বললো। বারুত ওয়ালারা বুরহানা থানার সাথে যোগাযোগ করলো। সেখানে পূর্বেই সেই মেয়ে ছিনতাইয়ের রিপোর্ট করা হয়েছিলো। বুরহানা থানা ওয়ালারা মহিলা পুলিশ দিয়ে বারুত নিয়ে এলো। হিরাকে ঐ থানা থেকে আমাদের গ্রামে নিয়ে আসা হলো।