(ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘হিরা’কে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার পর্ব-৩
(ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘হিরা’কে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার পর্ব-৩ আমরা তাকে বাড়িতে রাখলাম, কিন্তু এমন খারাপ মেয়েকে রাখিই বা কীভাবে? হিরা বললো, যদিও আমাকে সন্ত্রাসীরা নিয়ে গেছে কিন্তু আমি আমার ইজ্জতকে সংরক্ষণ করেছি। এ কথাটি কারও বিশ্বাস হয়নি। কেউ বিশ্বাস করেনি। শিক্ষিত পরিবার থেকে একটি বিয়ের প্রস্তাব এলো। তারা বললো, ডাক্তারি পরীক্ষা করে নিন। আমরা দুই ভাই তাকে পরীক্ষা করাতে বুরহানার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরিকল্পনা ছিলো, যদি তার ইজ্জত ঠিক থাকে, তাহলে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। অন্যথায় মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেবো।আল্লাহর মেহেরবানী যে, রিপোর্ট ভালো হয়েছে। তার ইজ্জত সংরক্ষিত আছে। আমরা খুশি মনে তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। এরপর থেকে সে মুসলমানদের খুব প্রশংসা করতো এবং বারবার একজন মুসলমান ছেলের ভদ্রতার কারণে তার বেঁচে যাওয়ার কথা বলতো। সে মুসলমানদের বাড়িতে যাতায়াত করতে শুরু করে। সেখানে এক মেয়ে তাকে ‘দোজখকা ঘটকা আওর জান্নাত কি কুঞ্জি’ নামে একটি বই দেয়। মুসলমানদের বই পড়তে দেখে আমরা তাকে অনেক মারপিট করি এবং বলি যে, সামনে যদি এ ধরণের বই পড়তে দেখি, তাহলে তোকে জবাই করে ফেলবো। কিন্তু ইসলাম তার মনকে তখন বেষ্টন করে ফেলেছিলো। তার অন্তরের অন্ধকার পর্দা খুলে দিয়েছিলো এবং তার অন্তরকে আলোকিত করেছিলো। সে এক মুসলমান মেয়ের সাথে মাদরাসায় গিয়ে একজন মাওলানা সাহেবের হাতে মুসলমান হওয়ার পর ঘরে শিরকের অন্ধকারে সে হাঁপিয়ে উঠে। সে উদাসীন অবস্থায় সময় কাটায়। হাসি-খুশি মেয়েটি এখন এমন হয়ে গেছে যেন তার সব কিছুই বদলে গেছে। জানি না সে কেমন করে প্রোগ্রাম বানিয়েছে। সে আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে এক মাওলানা সাহেবের স্ত্রীর সাথে ফুলাত চলে যায়। আচ্ছা, এখন ঐ হিরাজী কোথায়? আমাদের পরিবার তার ব্যাপারে খুবই চিন্তিত। সে তো খুব ভালো মানুষ ছিলো। আচ্ছা। আপনি তাহলে হিরাজীর চাচা?হ্যাঁ। মাওলানা সাহেব তার নাম হিরা রেখেছিলেন। আর সেই নেককার মেয়েটির জালেম চাচা হলাম আমিই (কাঁদতে কাঁদতে)।আগে তো বলুন হিরাজী কোথায়?বলছি আমার ভাই। বলছি, আমার অত্যাচার ও পশুত্বের কাহিনী মনে হয় আপনার জানা আছে যে, মাওলানা সাহেব (মাওলানা কালীম সিদ্দিকী সাহেব) সতর্কতাবশত; তাকে দিল্লীতে তার বোনের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এবং সে সেখানেই থাকতো। ওখানে সে সুন্দর মনোরম পরিবেশ পেয়েছিল। মাওলানা সাহেববের বোনকে রাণী ফুফু বলে সম্বোধন করতো। আপনার আম্মুও তাকে খুব ভালোবাসতেন। তার রাণী ফুফু তাকে অনেক দ্বীনী প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বোধ হয় সে এক-দেড় বছর দিল্লীতে ছিলো। ফুলাত এবং দিল্লীতে অবস্থান করায় সে এমন মুসলমান হয়েছিলো যে, যদি এখন কুরআনে হাকীম অবতীর্ণ হতো; তাহলে শহীদ মেয়েটির নাম নিয়েও আলোচনা হতো। ঘরের লোকদের প্রতি তার খুব ভালোবাসা ছিলো। বিশেষত, তার মায়ের প্রতি। তার মা অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকতো।এক রাত্রে সে তার মাকে স্বপ্নে দেখে যে, তার মা মারা গেছে। ঘুম ভাঙার পর তার মায়ের কথা খুব মনে পড়লো। যদি তার মা বেঈমান অবস্থায় মারা যায়, তাহলে কী হবে? এ কথা মনে করে সে কাঁদতে লাগলো। এমনকি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। বাড়ির সকলেই তাকে সান্ত্বনা দিলেন।সাময়িকভাবে যদিও সে চুপ হয়ে গেলো। কিন্তু বার বার তার স্বপ্নের কথা মনে পড়তে থাকে। সে আপনার আব্বুর কাছে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি চাইলে আপনার আব্বু তাকে বুঝালেন যে, তোমার পরিবার তোমাকে জীবিত থাকতে দেবে না। এর চাইতেও ভয়ের ব্যাপার যে, তোমাকে আবার হিন্দু বনিয়ে দেবে। ঈমানের ভয়ে সে কিছু দিন থেমে থাকলো। আবার যখন বাড়ির কথা মনে পড়তো তখন বাড়ি যাওয়ার জন্য জিদ করতো।মাওলানা সাহেব অপারগ হয়ে অবশেষে তাকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিলেন। কিন্তু বলে দিলেন যে, পরিবারকে দাওয়াত দেয়ার নিয়তে বাড়ি যাবে। বাস্তবেই যদি তোমার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে সবচাইতে বড় হক হলো, তুমি তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে।