(ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘হিরা’কে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার পর্ব-৫
(ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ‘হিরা’কে জীবিত অবস্থায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তারই চাচা) জনাব আব্দুল্লাহ ভাই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার পর্ব-৫
জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি তার উপর পড়তেই তার কাপড়ে দ্বাউ দ্বাউ করে আগুন লেখে গেলো।
সে গর্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলো এবং জ্বলন্ত আগুনে দাঁড়িয়ে আসমানের দিকে হাত উঠিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, হে আমার আল্লাহ্। আপনি আমাকে দেখছেন না? আমার আল্লাহ্। আপনি কি আমাকে দেখছেন না? হে আমার আল্লাহ। আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না? হ্যাঁ অবশ্যই আপনি ‘গারে হিরাকে’ ভালোবাসেন। আর গর্তের মধ্যে জ্বলন্ত হিরাকেও ভালোবাসেন, তাই না? আপনার ভালোবাসার পর আর কোন জিনিসের প্রয়োজন নেই। অতঃপর সে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো, আব্বু। অবশ্যই আপনি ইসলাম গ্রহণ করে নেবেন। চাচাজী। অবশ্যই মুসলমান হয়ে যাবেন। এতে আমি অনেক রাগ করলাম। আমি ভাইয়াকে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে এলাম। ভাইয়া আমাকে বলতে লাগলেন যে, আর একবার তাকে বুঝিয়ে দেখতে। কিন্তু আমি এতে রাগান্বিত হলাম, ফেরার (সময় গর্ত থেকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর আওয়াজ শুনতে পেলাম এবং আমরা আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য(!) পালন করে বাসায় চলে এলাম।
কিন্তু শেষে এ শহীদার ভালোবাসায় এই জানোয়ারের পাথরের মত শক্ত আত্মাও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। আমার ভাই বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে গেলেন। তার অন্তরে একটি ব্যথা স্থায়ীভাবে বসে গেলো। আর এটাই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ালো। মৃত্যুর দু’দিন পূর্বে আমাকে ডেকে বললেন, আমি জীবনে যা করেছি তো করেছি। কিন্তু আমার মৃত্যু হিরার ধর্মের উপর হবে। তুমি কোনো মাওলানা সাহেবকে ডেকে নিয়ে এসো। আমিও ভাইয়ার অবস্থা দেখে আর স্থির থাকতে পারলাম না। ভেঙে পড়লাম। আমাদের এলাকার ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করে তাঁকে বাসায় নিয়ে এলাম। ভাইয়া তাকে কালেমা পড়াতে বললেন। তিনি কালেমা পড়ালেন। তার মুসলিম নাম রাখলেন আব্দুর রহমান। তিনি আমাকে ইসলামি পন্থায় দাফন করতে বললেন। আমার জন্য এ কাজ অত্যন্ত কঠিন ছিলো। কিন্তু আমি আমার ভাইয়ের অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করার জনা কৌশল অবলম্বন করলাম এবং চিকিৎসার বাহানায় দিল্লীতে নিয়ে গেলাম।
তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলাম। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। অতঃপর আমি হামদর্দের এক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করি এবং তাকে বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলি। তিনি কিছু মুসলমানকে ডেকে তার দাফন- কাফনের ব্যবস্থা করলেন।
ইসলাম থেকে তো দুশমনি কমে গেলো। কিন্তু ভাইয়ার মুসলমান হয়ে মারা যাওয়ায় আমার অন্তরে দুঃখ-বেদনা ছিলো। ভাইয়া মুসলমান হয়ে মারা যাওয়ার কারণে আমার বিশ্বাস হয়ে গেলো যে, ভাবিও মুসলমান হয়ে মারা গেছেন। আমার মনে হচ্ছিল যে, কোনো মুসলমান আমাদের বাড়িতে যাদু করে রেখেছে এবং অন্তরকে বেঁধে রেখেছে যে, শেষ পর্যন্ত এক এক করে সকলেই নিজ ধর্ম ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করবে।
আমি অনেক কবিরাজের সাথেও আলোচনা করেছি। এক ব্যক্তির খোঁজে শামেলি থেকে আউন যাচ্ছিলাম। বাসে উঠলাম। বাসটি কোনো মুসলমানের ছিলো। ড্রাইভারও ছিলো মুসলমান। সে ক্যাসেটে কাওয়ালি চালিয়ে রেখেছিলো। কাওয়াল ছিল বৃদ্ধ বয়সী। তার মধ্যে আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক বৃদ্ধার খেদমত এবং তার ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা ছিলো। আর স্পিকারটি ছিলো আমার মাথার উপর। বাস ঝিনঝানায় থামলো। সেই কাওয়ালি ইসলাম সম্পর্কে আমার ধারণাকে পাল্টে দিলো।
আমার মনে হলো, যে নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই ঘটনা তিনি মিথ্যা হতে পারেন না। আমি আউনে না নেমে কিনঝানায় নেমে গেলাম এবং আমার মনে হলো যে, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। অতঃপর শামেলীর বাসে উঠলাম। ক্যাসেটে পাকিস্থানের মাওলানা হানিফ সাহেবের ওয়াজ চলছিলো। তাঁর বয়ান ছিলো মৃত্যু ও তার পরের অবস্থা সম্পর্কে। আমার শামেলিতে নামার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু সেই ওয়াজ শেষ হয়নি। শামেলি বাস টার্মিনালে এসে ড্রাইভার ক্যাসেট প্লেয়ার বন্ধ করে দিলো। আমার বক্তৃতা শোনার খুব আগ্রহ ছিলো। জানতে পারলাম বাসটি মুজাফফরনগর যাবে। তাই বক্তৃতা শোনার জন্য মুজাফফরনগর এর টিকেট কাটলাম। বঘরা গিয়ে বক্তৃতা শেষ হয়ে গেলো। বক্তৃতাটি আমার ও ইসলামের মাঝে দূরত্ব অনেক কমিয়ে দিলো। আমি বুরহানা রোডের ওপর নেমে ছিলাম এবং যাওয়ার জন্য বুরহানার গাড়িতে উঠলাম।
আমার পাশেই এক মওলানা সাহেব বসেছিলেন। আমি তাকে বললাম যে, আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। আপনি কি এ ব্যাপারে আমাকে কিছু সহযোগিতা করতে পারবেন। তিনি বললেন, আপনি ফুলাত চলে যান এবং মাওলানা কালীম সিদ্দিকী সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করুন। তাঁর থেকে ভালো মানুষ আমাদের এলাকায় আর পাওয়া যাবে না।
আমি ফুলাতের ঠিকানা নিলাম এবং বাড়ি না গিয়ে ফুলাত চলে গেলাম মাওলানা সাহেব ছিলেন না। তিনি পরের দিন আসার কথা ছিলো। রাতে এক মাস্টার সাহেব মাওলানা সাহেবের লিখিত বই ‘আপ কি আমানাত আপ কি সেওয়ামে এক কপি দিলেন। এই বইটি পড়ে আমি মুগ্ধ হলাম। মাওলানা সাহেব পরদিন সকালে না এসে রাতে বাসায় ফিরলেন। আমি মাগরিবের পর তার কাছে মুসলমান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলাম এবং বললাম যে, আমি ইসলাম সম্পর্কে জানতে এসেছিলাম কিন্তু ‘আপ কি আমানাত আপ কি সেওয়ামে আমাকে শিকার করে নিয়েছে। মাওলানা সাহেব খুব আনন্দিত হলেন এবং ১৩ জানুয়ারি ২০০০ ইং তারিখে আমাকে কালেমা পড়ালেন
আমার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। রাতে সেখানেই অবস্থান করলাম এবং মাওলানা সাহেবের কাছে ১ ঘন্টা সময় নিলাম ও আমার এই নির্যাতনের নির্মম কাহিনী শুনালাম। মাওলানা সাহেব আমার ভাতিজী হিরাকে হত্যা করার কথা শুনে অনেক সময় পর্যন্ত কাঁদতে থাকেন এবং বললেন যে, হিরা আমাদের এখানেই ছিলো। দিল্লীতে আমার বোনের কাছে থাকতো।
মাওলানা সাহেব আমাকে সান্ত্বনা দিলেন, ইসলাম আপনার পিছনের সমস্ত গুণাহ মুছে দিয়েছে কিন্তু আমার অন্তর সান্ত্বনা পাচ্ছিলো না যে, এ ধরনের হিংদ্রে অত্যাচারীর ক্ষমা কীভাবে হবে? মাওলানা সাহেব আমাকে বললেন, ইসলাম পিছনের সমা গুণাহ মুছে ফেলে। আপনি এতগুলো হত্যা করেছেন, এখন আপনার সান্ত্বনার জন্য আপনি মুসলমানদের জান বাঁচানোর চেষ্টা করুন। কুরআন বলে যে, সং কাজ গুনাহ কে দূর করে দেয়। বর্তমানে আমি আমার মনের সান্ত্বনার জনা এবং মজলুমের অন্তরকে জাগাবার জন্য বিপদগ্রস্ত, নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলমানদের সহযোগিতা ও সহ-মর্মিতার চেষ্টা করি।