story-part-2

এই গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-২

ব্যক্তিগত জীবনে আমি কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট। প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত কথা বলতে আমার বিরক্ত লাগে। ফ্যামিলিতে আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে আমাকে সবাই একটু বেশিই ভালোবাসে। কিন্তু ছেলে হিসেবে আমি তাদের দিয়েছি শুধুই কষ্ট।

২০১৯ এর কথা। সামনে আমার এস.এস.সি. এক্সাম। তাই বাসায় একজন টিচার রাখা হয়। আমাকে যে ভাইয়া পড়াতেন উনার কাছে থেকে আমি ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি অনেক কিছুই জানতে পারি। পড়ার পাশাপাশি উনি ইসলামের বিভিন্ন কাহিনী আমার সাথে শেয়ার করতেন। কিয়ামতের বিভিন্ন আলামত যেগুলো হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, এগুলো উনার কাছ থেকে প্রথম শুনেছিলাম। আমার এগুলো শুনতে ভালোই লাগতো।

এগুলো জানার পর ইসলাম নিয়ে আমার জানার আগ্রহ আরও বেড়ে যায় । শুধু ইসলাম না আমার দেখা প্রত্যেক প্রধান ধর্মেই সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদের কথা বলা আছে। নবম-দশম শ্রেণির হিন্দুধর্ম বইতে পড়ছিলাম ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ইহুদী, খৃষ্টান ধর্মেও ঈশ্বরের একত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, যিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। এমনকি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় মক্কার কাফিররাও “আল্লাহ একজন” এটা বিশ্বাস করতেন।

কিন্তু তাদের দম্ভ এবং অহংকার আল্লাহকে মুখে স্বীকৃতি দিতে দেয় নি। তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মূর্তির পূজা করে এবং তার সাথে মহামহিম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়ালাতা’আলাকে শরীক করে। একমাত্র ইসলামেই তাওহীদ অর্থাৎ ঈশ্বরের একত্ববাদের আসল সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে আপনি এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে শরীক করতে পারবেন না এবং এটাই ইসলাম এর মূলস্তম্ভ।

“তাওহীদ”- যার মাধ্যমে একজন মানুষ মুসলিম নাকি কাফির তা নির্ধারিত হয়। ইসলাম যে সত্য ধর্ম তা জানার পরও তখন আমার মধ্যে এতটা সাহস ছিল না যে আমি ইসলাম গ্রহণ করব। স্বাভাবিক জীবনে কোন প্রকার পরিবর্তন নিয়ে আসাটা কঠিন হচ্ছিল।

২০২০-এর দিকে করোনা মহামারি আকার ধারণ করে। সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বাসায় বসে ফেসবুকে স্ক্রল করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। পাশাপাশি অনলাইনে বিভিন্ন ইসলামের ইতিহাসও জানার চেষ্টা করি। তখন জেরুজালেমে কে ঘিরে বিভিন্ন রহস্য আমার চোখে পড়ে। জেরুজালেম মুসলিম, খৃষ্টান এবং ইহুদিদের জন্য অনেক পবিত্র একটি স্থান। আর এই জেরুজালেমকে ঘিরেই মুসলিম, ইহুদি ও খৃষ্টান সবার অনেক ইতিহাস লুকিয়ে আছে যা জানার অনেক আগ্রহ ছিল আমার।

দাজ্জাল ও ঈসা (আ.) এরও ঠিক এইখানেই আবির্ভাব ঘটবে। পুরো পৃথিবী জুড়ে নিরীহ মুসলমানদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন দেখে একটা জিনিস আমার কাছে ক্লিয়ার হয়েছিল যে সত্যের পথে কারা চলছে। সত্যের পথে যারা থাকে তাদের উপর যুগ যুগ ধরে অত্যাচার হয়ে আসছে, হবে এবং হতেই থাকবে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম।

যদি আপনি নির্যাতিত না হন, বাঁধার সম্মুখীন না হন, তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার বোঝা সত্যের মাঝে ঝামেলা রয়েছে। এক শাইখের কাছে শুনেছিলাম পরীক্ষা তো মুমিনের জন্যই। কাফিরের জন্য কোন পরীক্ষা আছে নাকি? তাদের জন্য তো এই দুনিয়াটা জান্নাত।

আমার প্রিয় আলেমদের লিস্টে অনেকেই আছেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আমি মিজানুর রহমান আজহারীকে পছন্দ করতাম। উনার লেকচারগুলো বেশি শুনতাম। নিজের মধ্যে ধীরে ধীরে একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাওয়া শুরু করি। ভাবতে থাকি জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে গিয়ে হলেও আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনবো। হয়তো তখন ফ্যামিলির কাছে আমার কথার একটা প্রাধান্য থাকবে।

ধর্ম নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে আমার এমন চিন্তার কারণগুলো যুবক ভাইয়েরা যারা আছেন তারা হয়তো ভালো বুঝবেন। করোনার ফলে যখন চারিদিকে শুধু মৃত্যূর সংবাদ তখন অনেকেই পরকাল নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করা শুরু করেছিলো। আমিও তখন ধীরে ধীরে ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ি। মসজিদ বন্ধ থাকায় মানুষ ছাদে গিয়ে নামাজ আদায় করতো। এই দৃশ্যগুলো দেখে আমার অন্তর প্রশান্ত হতো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *