এই গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৩
এবার আসি আসল ঘটনায়। ২০২১ সাল।
আমি আমার লাইফস্টাইল নিয়ে অনেকটাই বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। করোনার বন্ধ একদিকে যেমন আশীর্বাদ হয়েছিলো, অন্যদিকে কিছুটা অভিশাপ বয়ে এনেছিলো। বিভিন্ন খারাপ নেশা, হারাম সম্পর্ক থেকে শুরু করে জাহিলিয়াতের একটা চরম লেভেলে চলে গিয়েছিলাম। এমন এক অন্ধকার জগতে ছিলাম যেখান থেকে আমি কোনোভাবেই বের হতে পারছিলাম না।
আমার সারাটাদিন ডিপ্রেশনের মধ্যে কাটতো। এই লাইফস্টাইল থেকে বের হতে চাইলেও আমি কোনোভাবেই বের হতে পারছিলাম না। ২০২১ এর মধ্যকার ঘটনা। আমার নানি বেশিরভাগ সময়ই আমার রুমে আমার সাথেই ঘুমাতো।
একদিন আমি আমার মতো ফোন চালাচ্ছি। রাত প্রায় ১২ টার দিকে হঠাৎ করে নানি অসুস্থতা অনুভব করে। নানির এই অবস্থা দেখে আমি অনেকটা ভয় পেয়ে যাই। তাড়াতাড়ি আব্বু-আম্মুকে ডেকে আনি। রাত তখন প্রায় ১টা। আমাদের চেনা-পরিচিত ডাক্তারের ফোন বন্ধ। আশেপাশে কোন ডাক্তারের চেম্বারও খোলা নেই।
আমাদের আত্মীয় স্বজন সবাই চলে আসে বাসায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নানি আমার সামনে মৃত্যুবরণ করেন। আমার লাইফে এই প্রথম আমি কাউকে নিজের চোখে মৃত্যবরণ করতে দেখেছি। তাও আমার অতি আপনজন। নানির শরীরে হাত রাখতেই আমার পুরো শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়।
তখন বুঝতে পারি এটাই কি তাহলে মৃত্যু? যে মানুষটাকে আজকে সকালেই আমি হাসিখুশি দেখলাম সেই মানুষটাই রাতে আমার সামনেই মৃত্যুবরন করলো! কিছুক্ষন পর সকাল হতে হতেই নানিকে শ্মশানে নিয়ে গোসল করিয়ে পুড়ানো হলো।
সেই মুহুর্তে আমি নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। যখন উনার একটা পা বেড়িয়ে আছে আর আমার সামনে আগুনে পুড়ছে। অথচ উনার এই পা ব্যথা হওয়ায় কতবার আমি টিপে দিয়েছি। এতটা যন্ত্রনাদায়ক!
আমার লাইফটা অনেকটাই অগোছালো হয়ে গিয়েছিলো। কোনোকিছুই ঠিকঠাক যাচ্ছিল না। আমার দরকার ছিল মানসিক প্রশান্তির, যা আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। প্রশান্তির খোঁজে জাহিলিয়াতের অনেক নিম্নস্তরে চলে গিয়েছিলাম। তবুও কোথাও আমি আমার শান্তির সন্ধান পাচ্ছিলাম না।
ধর্মপালন, পূজা – এগুলো থেকে আমি নিজেকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম। বলতে গেলে ধর্ম থেকে আমার আস্থা একদমই উঠে গিয়েছিল। একদিন আমাকে আমার এক বন্ধু বলেছিলো এসব কিছু থেকে বের হতে চাইলে নিজেকে একক মহাপরাক্রমশালী সত্তার নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে। নামাজ মানুষকে হতাশা, পথভ্রষ্টতার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে। মানসিক প্রশান্তি পেতে চাইলে তোমাকে ইসলাম নামক পরশপাথরের সংস্পর্শে আসতে হবে।
আমার মৃত্যু কখন আসবে এটা আমি নিজেও জানি না। ওর কথায় মনে জিদ চেপেছিল যে আর না! এবার আমি জানবোই ইসলামে কি এমন আছে? ইসলাম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির পরে কে-ই বা ইসলামে প্রবেশ না করে থাকতে পারে? ধীরে ধীরে ইসলামে প্রবেশের চেষ্টা করতে থাকলাম।
ভাবলাম নাহয় গোপনে ইসলাম পালন করবো কেউ জানবে না। আমার এক ফ্রেন্ড এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ইসলামে আসার জন্য আমাকে কি কি করতে হবে? সে এটা শুনে অনেকটাই খুশি আবার অবাকও হয়ে যায়।
প্রথমে চিন্তা করেছিলাম আমাকে যে ভাইয়া আগে পড়াতে আসতো তার কাছে যাবো। পরে ভাবি না ফ্রেন্ডদের মধ্যে বিষয়টা বেশি গোপন থাকবে। ওর থেকে জানলাম কালিমা পড়ে, এক আল্লাহ এবং রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে অন্তরে এবং মুখে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশ করতে হয়।
আমাদের এখানে “————” মাসজিদ নামে একটা মাসজিদ আছে। সেখানে গিয়ে এক হুজুরের সাথে কথা বলি। উনি বলেন, ‘প্রথমে কালিমার ঘোষনা দেওয়া লাগবে। কিন্তু যতক্ষণ এফিডেভিট না হচ্ছে ততক্ষণ আমরা কিছুই করতে পারবো না।
এরপর আমরা আরও তিনটা মাসজিদে যাই। সব জায়গায় একই কথা। কেউ এফিডেভিড ছাড়া রিস্ক নিতে চান না। আমি আমার ফ্রেন্ডকে বললাম ‘তুই না হয় কালিমা পড়ায় দে’। অবশেষে ফ্রেন্ডের মুখেই…
‘আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রসুলুহু’।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রসূল।