এই গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-১
২০০৩ সালে একটি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারে আমার জন্ম। ধর্ম নিয়ে আমার কখনই কোনো মাথা ব্যাথা ছিল না। আমার বাবা-মা যেটা করেছে আমিও সেটাই অন্ধভাবে অনুসরণ করেছি। সমস্যা কি?
একেবারেই স্বাভাবিক জীবন ছিল আমার। মা-বাবার অনেক আদরের ছেলে ছিলাম আমি। ছোটবেলা থেকেই ধর্ম নিয়ে কখনও কেউ আমার সাথে বাড়াবাড়ি করেনি, কখনই না তা সে হিন্দু হোক বা মুসলিম। কিন্তু মাঝে মাঝে আমি বন্ধুদের থেকে ইসলামের দাওয়াহ পেতাম। অনেকে অনেকভাবে ইসলামের দাওয়াত দিত। এগুলো আমি কখনই নেগেটিভভাবে নেইনি, আর না তো সিরিয়াসভাবে।
সবার কাছেই আমার একটাই প্রশ্ন ছিল সৃষ্টিকর্তা যদি আসলেই চাইতেন আমি ইসলাম এ আসি তাহলে কেন তিনি আমাকে হিন্দু পরিবারে জন্ম দিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে একদিন আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে বলেছিল, আল্লাহ মানুষকে এমন কোন “ভিন্ন” জিনিস দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে কারণে মানুষ সৃষ্টি জগতের সেরা জীব?
তা হলো আল্লাহ মানুষকে উপলদ্ধি করার জন্য মেধা এবং অনুভব করার জন্য অন্তর দিয়েছেন। এগুলা থাকার পরও আমি যদি সত্যকে বুঝতে না পারি সেটা অবশ্যই আমার ভুল। কারণ আল্লাহতায়ালা তাঁর শেষ নবি (সাঃ) -কে তাঁর কালাম পবিত্র কুরআন দিয়ে পাঠিয়েছেন যা রক্ষা করার দায়িত্ব তিনি নিজে নিয়েছেন। আর কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা ১৪০০ বছর আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে এবং এটা কোন মানবসৃষ্ট গ্রন্থ নয় যা এখন আধুনিক বিজ্ঞানীরাও মানতে বাধ্য।
যাই হোক আমিও মেনে নিলাম তার যুক্তি। এর আগে পর্যন্ত আমার কন্সেপ্টটা এমন ছিল যে সবার ধর্মই সত্য। যার যার জন্য তার তার ধর্ম সত্য। সৃষ্টিকর্তা তো একজনই। একেকজন একেকভাবে তাঁকে ডাকে। কিন্তু আরেকটা প্রশ্ন ছিল আমার। সবাই বলে সৃষ্টিকর্তা এক, তাহলে সবাই এতো এতো সৃষ্টিকর্তার পুজা করে কেন?
যাই হোক পরের কথায় আসি। আমার ফ্যামিলির সবাই সব ধর্মকেই শ্রদ্ধা করে, কারও মনে কখনও ইসলামবিদ্ধেষ ছিল না। দেখা যাচ্ছে মসজিদে আযান দিচ্ছে আর মা টিভির সাউন্ড কমিয়ে দিচ্ছেন।
ডাঃ জাকির নায়েকের লেকচার প্রায়ই শুনতাম। কারণ সবসময় চেষ্টা করতাম ইসলাম এর কোন না কোন ভুল খুঁজে বের করার, তারপর তা নিয়ে জাকির নায়েকের কোন আলোচনা আছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম এবং পেয়েও যেতাম। উনার একটা লেকচার যেটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছিল তা হলোঃ
ন্যায়পরায়নতা, সবার সাথে সৎ আচরণ, অহংকার না করা, খারাপ কাজ না করার কথা প্রায় সকল ধর্মই বলে, কিন্তু ইসলাম শুধু এসব বলে না বরং কিভাবে তা সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে সেই পথটাও দেখিয়ে দিয়েছে।
আরেকটা জিনিস আমাকে সবচাইতে বেশি ইসলাম এর দিকে টেনেছে তা হলো সালাত/নামাজ। সনাতন ধর্মে আমি কখনও নির্দিষ্ট কোন ধরণের ইবাদত করতে দেখি নাই। সবাই নিজের খেয়ালখুশি মত পুজা করে। একেকজন একেকভাবে পুজার সিস্টেম আবিষ্কার করে। ঘরে হলে সকাল আর সন্ধ্যা গান গাওয়া, আর একটু প্রণাম করে চলে যায়, আর বেশি ভক্তি জাগলে ধ্যান করা। কিন্তু তাও বাধ্যতামূলক না। আর মন্দিরে তো ব্রাক্ষ্মণ থাকে সে মন্ত্র পড়ে পুজা করে। আর সাধারণ মানুষ এর কাজ হলো এসে প্রসাদ খাওয়া। তাও কিছু সংখ্যক মেয়েরা।
ছেলেদের তো মাস কি বছরেও মন্দিরের ধারেকাছে দেখা যায় না। আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি। আবার তার বিপরীতে ইসলামে বালেগ হওয়ার পর সবার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। ছেলেমেয়ে,বৃদ্ধ সবার জন্যই। আল্লাহর ইবাদত করার জন্য পদ্ধতি ফিক্সড করে দিয়েছেন আল্লাহ।
এমনিতে আপনি একটা বিড়ালকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানি পান করালে সেটাও একটা ইবাদত। আর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা তা হলো ইবাদতে আপনি না নতুন কিছু যোগ করতে পারবেন, না তো কিছু বাদ দিতে পারবেন। নিজের খেয়াল খুশি মতো নামাজ পড়া যাবে না। যেমন ৪ রাকাত নামাজে আপনি ৫ রাকাত পড়তে পারবেন না, না তো ৩ রাকাত। নিজের খেয়ালখুশি মতো, নতুন কিছু আবিষ্কার করে ইবাদত করার কোনো নিয়ম নেই। তা না হলে তা হবে বিদ’আত। যেভাবে বলা হয়েছে ঠিক সেভাবেই।
আমি মন্দিরে দুইবেলা একজন মানুষ না দেখলেও, মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত মুসল্লিতে ভরপুর দেখেছি। তখন মনে একটা আফসোস কাজ করতো।
প্রিয় ভাই অন্যদের কথা না হয় বাদই দিলাম আপনি আমি যদি নিজের আসল রব কে চেনার পরও, তাঁকে ইবাদত করার সঠিক পদ্ধতি জানার পরও আমরা যদি তাঁর গুরুত্ব না বুঝি, চুড়ান্ত জ্ঞান কুরআন থাকার পরও যদি সেটার গুরুত্ব না দেই তাহলে তো আমরা সবকিছু পেয়েও ব্যর্থ।
চলবে ইন শা আলাহ……………