গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৫
আমি অনেক জেদি ছিলাম। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তো কি হয়েছে? কে কি করবে? এমন কথা মাঝে মাঝেই রাগের মাথায় বলে ফেলতাম। একদিন এক ফ্রেন্ডের দোকানে বসে আছি। হঠাৎ মাসতুতো দুলাভাই ফোন দিয়ে গরম গলায় বাসায় আসতে বলে। আমিও অনেক উল্টা-পাল্টা ভাবে কথা বলে জিদ দেখিয়ে ফোন কেটে দিই।
ফ্রেন্ডের সাথে পরামর্শ করে ভাবলাম যাই বাসায় গিয়ে দেখি কি অবস্থা! যা হওয়ার দেখা যাবে। বাসায় গেলাম। দরজার বাইরে দেখি অনেক জুতা। বুঝতে পারলাম আত্মীয়-স্বজন অনেকেই বাসায় এসেছে।
কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলতেই, সোজা নিজের রুমে চলে যাই। জামা কাপড় খুলে ফ্রেশ হয়ে বসলাম। হঠাৎ আমার মাসি এসে জিজ্ঞেস করল, ‘অমিত তোর সমস্যা কি? তুই কি আসলেই মুসলিম হতে চাস? আমাকে সত্যি করে বল! তোর আম্মুকে একজন এসে বলেছে, তোকে নাকি সে মসজিদ থেকে বের হতে দেখেছে?’
আমি একদম চুপ! কোন ভাবেই কিছু বলা যাবে না। কারণ আমার এফিডেভিট নাই। একারণে স্বীকার করলে আমার সাথে সাথে আমার ফ্রেন্ড এবং যারা আমাকে সাহায্য করেছে প্রত্যেকেই বিপদে পড়বে।
আমি চাইতাম না যে আমার জন্য আমার ফ্রেন্ডরা বিপদে পড়ুক। কিছুক্ষন পর দুলাভাই এসে হুমকি দেয় আর আমিও গরম হয়ে যাই। কাউকে ফোন দেওয়ার সুযোগ নাই, আমার সব সিম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাসার বাইরেও যেতে পারছিলাম না।
সেই রাতে এত পরিমাণ ঝগড়া করলাম যে, জিদে আমার পেশার বেড়ে যাই। বমি করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর সবাই আমাকে একা ছেড়ে দেয়। আম্মু পাশে বসে কান্নাকাটি করছে। কান্না করে করে আমাকে বলছে, ‘অমিত? বাবা, সবকিছু আমাকে খুলে বলতো। কি হয়েছে তোর? কি করতে চাস তুই? তোর খুশিতেই আমার খুশি’।
আম্মুর কান্নাকাটি দেখে আমার মন গলে যায়। ভাবলাম উনাকে সব বলে দেই। আম্মুকে আমি সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম। কারণ আম্মু আমার সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি ছিল। তাই উনাকে সবকিছু খুলে বললাম। আমার ইসলাম ভালো লাগে। আমি এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে বাঁচতে চাই, জীবনযাপন করতে চাই।
সব দলিল দেখালাম যে হিন্দু ধর্মেও রাসুলের (সাঃ) কথা আছে। তাই তোমরা আমাকে আমার মতো আমার ধর্ম পালন করতে দাও। আমি তোমাদের সাথেই থাকবো। কিন্তু আমাকে ইসলাম পালনে তোমরা বাঁধা দিবে না।
আম্মু অনেকটা কষ্ট পেলেন এগুলো শুনে। তবুও আমাকে বললেন, “তুই মুসলিম হবি? শুধু নামাজ-কালাম, রোজা রাখবি, এতটুকুই তো? রাখিস। কিন্ত নিজের পড়ালেখাটা ঠিকঠাক রাখবি।” আমি তো খুব খুশি। ভেবেছিলাম আম্মু সবকিছু মেনে নিয়েছেন।
কিছুতেই বুঝতে পারিনি আমি ভয়ংকর রকমের একটি পরিকল্পিত ফাঁদে পা দিয়েছিলাম। আম্মু পেছনে ফোন রেখে আমার সব কথা রেকর্ড করেছিল। রাতের খাবার খেয়ে নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি মনে করেছিলাম ঘটনা এখানেই শেষ, কিন্তু আসলে ঘটনাতো এখান থেকে শুরু! আমি জানতাম না পরেরদিন সকালে আমার সাথে কি হতে চলেছে…..