গল্পটি-আপনাকে-কাঁদাবেই-পর্ব-৬

গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৬

১০ই সেপ্টেম্বর ২০** এর ঘটনা।

রাতে সব হয়ে যওয়ার পর সকাল প্রায় ৭ টার দিকে ঘুম থেকে উঠতেই দেখি দুলাভাই সহ ৪/৫ জন লোক এসে হাজির, যেন আমাকে মারতে এসেছে। দুলাভাই বলল চল তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। আমি বুঝতে পারছি যে এরা ডাক্তারের কাছে না, বরং অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে! কিন্তু তবুও কিছু না বলে মুখ না ধোয়া অবস্থায় চলা শুরু করলাম। কারণ আমি ছিলাম নিরুপায়। আমার কিছুই করার ছিলো না।

কিছু করতে গেলেও লোকজন যারা এসেছে তারা আমাকে জোরজবরদস্তি করে নিয়ে যাবে। আমার হাত বাঁধা। তার চাইতে ভালো স্বেচ্ছায় চলে যাই, যা হওয়ার তা দেখা যাবে। আল্লাহ যার সাথে আছেন তার ক্ষতি করার সাধ্য কারোরই নেই। এইদিকে দেখি আব্বু-আম্মু কান্না করছে।

হাঁটার সময় দেখি যারা আমাকে নিতে এসেছিলো তারা বডিগার্ডের মতো আমাকে চারপাশে ঘিরে আছে। তারপর তাদের মাইক্রোবাসে উঠে বসলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে। আব্বু-আম্মু একদম পিছনের সিটে বসলো। আমি মনে মনে চিন্তা

করি বাড়িতে পাঠালে আমি কি ওইখান থেকে পালাতে পারবো না নাকি?

মাইক্রোবাস দীর্ঘক্ষণ ধরে চলছে, কিন্তু আমি জানি না ওরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। পথে অনি*** মোড় থেকে একটা ছেলে উঠলো গাড়িতে। গাড়িতে উঠে আমার পাশে বসলো আর কিছুক্ষণ পর পর আমার ফোনের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে যে আমি ফোনে কি করছি। আর এইদিকে আমার সবগুলো সিম বন্ধ।

আমি কাউকে কল করা তো দূরের কথা, ফেসবুকে ঢুকে কাউকে একটি মেসেজ দিবো সেটাও পারছি না। মানে এখন কি হচ্ছে তা দেখা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না। জীবনে নিজেকে এত অসহায় আর কখনই মনে হয়নি, যেমনটা আজ হচ্ছে।

যেতে যেতে রাস্তায় দোকানের ব্যানার গুলোতে ঠিকানা দেখার চেষ্টা করছি, দেখি লেখা আছে খাগড়াছড়ি। আজব তো! এরা আমাকে খাগড়াছড়ি কী কারণে নিয়ে আসলো? যাওয়ার পথে সেনাবাহিনীর দুইটা ক্যাম্প দেখতে পেলাম। ভাবলাম একটা চিৎকার দিয়ে তাদের কাছে সাহায্য চাই,কিন্তু সাহস হলো না।

গাড়ি এখন পাহাড়ের উপরের দিকে উঠছে আর আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। অবশেষে গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে নেমে দেখি এটা তো একটা আশ্রম। সেখানে একটা কক্ষে নিয়ে বসালো আমাকে। পাশে বসা আছে দুইজন ছেলে আর আমার দুলাভাই।

ছেলে দুইজন আমার থেকে বয়সে দুই-এক বছর বড় হবে। এরপর তারা আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা শুরু করলো। যেমন- ভাই কি নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছেন নাকি? আমি বললাম, হ্যাঁ, কেন?

তারপর তারা বলল, আমাদের এত সুন্দর সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে কেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন? জবাবে আমি বললাম, যে ধর্মে ছেলেরা পূজায় মদ খেয়ে, ছেলেমেয়েরা একসাথে অশালীনভাবে নাচানাচি করে নিজেদের দাবি করা সৃষ্টিকর্তার সামনে, সেই ধর্মকে আপনি সুন্দর বলেন কোন দিক দিয়ে? তাদের মুখে আর কোন কথা নাই।

তারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো যে আমাকে এভাবে বোঝাতে পারবে না। তারপর আমার দুলাভাই আমার থেকে আমার ফোন টা নিয়ে ফোন এর পাসওয়ার্ড চাইলো কিন্তু আমি দিলাম না। বললাম আমাকে মেরে ফেললেও ফোনের পাসওয়ার্ড দিবো না। কারণ ফোনের মধ্যে আমার অনেক ইনফরমেশন ছিল। তাই কোন ভাবেই তাদের ফোন খুলে দেওয়া যাবে না। তারপর একজন ফোনটা নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও খুলতে পারছে না। এরপর তারা বাইরে গেল। আমি একা, তাই মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি আল্লাহ তুমি আমাকে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাও। সূরা ফাতিহার প্রথম চার আয়াত পারতাম ওইটাই মনে মনে পড়ছিলাম।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *