গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৭
হঠাৎ তারা আমাকে ডাকলো, গেলাম উঠানে। ***** ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের এক নেতা গরম গলায় আমার সাথে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলো। সে বললো,ফোনটা খোল। আমিও আরেক ঘাড়ত্যাড়া ছিলাম, আমি বললাম আমার ফোন আপনাকে খুলে দিব কেন? সে বললো তোরে ফোন খুলতে বলসি তুই ফোন খুলবি।
যখন আমি কোনভাবেই ফোন খুলছি না তখন আমার আব্বু-আম্মু কে ডেকে বললো আমরা ওর সাথে যাই করি না কেন আপনাদের কোন সমস্যা নাই তো? আব্বু-আম্মু বললো আপনারা যা ইচ্ছে তাই করেন। কিন্তু ওকে আমাদের ধর্মে ফিরিয়ে আনেন। তারপর আব্বু-আম্মু ভিতরে চলে গেল।
তারপর নেতা তার চ্যালাগুলারে বললো মোটা লাঠি নিয়ে আসতে। তারা দৌড়ে গিয়ে লাঠি নিয়ে আসলো। বড় বড় মোটা-শক্ত ৩টা লাঠি। আমাকে বললো এখনও সময় আছে খুল। কিন্তু যতো যাই হয়ে যাক আমি কোনভাবেই খুলবো না। তারপর নেতা তাদেরকে বললো আমাকে মারার জন্য।
প্রথম আঘাত আমার বাম পায়ে করে, যার ফলে আমি সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যাই। এরপর তিনদিক থেকে আমাকে খোলা একটা উঠানে মারতেই থাকল। প্রায় ৭ মিনিট ধরে মারার পর ৪ জন ৪ দিক থেকে ধরে আমাকে মন্দিরে নিয়ে গেলো। তারপর আরও কিছুক্ষণ মারতেই থাকলো।
মাইরের যন্ত্রণা আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না। এইদিকে আমার বাম পা আর বাম হাত পুরোপুরি অবশ হয়ে গেছে। ওইদিকে দুলাভাই সব কিছু দেখছে, আমি গিয়ে উনার পায়ে ধরলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। তারপর নেতা আমার সামনে চেয়ার রেখে বসে আমাকে আবার ফোন খুলতে বললো।
আমি না পেরে ফোন খুলে দিতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় দেখি আমার ফোন রিবুট হয়ে গেছে। আমি জানি না কিভাবে এটা হয়েছে, এটা হয়তো আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য রহমত ছিল। এখন আমার আর ফোন খুলে দিতে কোন সমস্যা নাই কারণ ফোন থেকে সবকিছু ডিলেটেড হয়ে গেছে।
দিলাম খুলে কিন্তু তারা কিছুই পেল না। পুরো ফোন থেকে সবকিছু ডিলেটেড। এরপর আবার মারতে মারতে বললো ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিতে। তাও দিলাম কিন্তু সেখানেও তারা কিছুই পায়নি। যখন তারা কিছুই খুঁজে পেলনা তখন আবার মারতে মারতে আমার মুখ থেকে সত্য বের করার চেষ্টা করে।
যেহেতু তারা কিছুই জানতে পারেনি। তাই আমি একটা বানানো কাহিনী তাদের বলে দিলাম যে আমি শুধু ইসলাম নিয়ে একটু জানার চেষ্টা করছি আর কিছুই না। আমার সাথে কেউই জড়িত না। কিন্তু এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, তাই আমাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু না! তারা আমাকে আবার মারতে থাকলো এবং এখন পর্যন্ত ২টা লাঠি ভেঙ্গে ফেলেছে।
যন্ত্রণায় আমি আল্লাহ বলে চিৎকার দিয়ে উঠতেই আরও বেশি মারতে থাকলো, কেন আমি আল্লাহ বলে চিৎকার করলাম।
এক পর্যায় তারা যখন দেখলো আমার অবস্থা খারাপ তখন আমাকে উঠিয়ে কক্ষে নিয়ে বসালো। শুধু মাথা বাদে আমার পুরো শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ এত ব্যথা করছিলো মনে হচ্ছিলো যেন ট্রাকের নিচে আমার হাড্ডিগুলো চাপা পড়েছে। পুরো শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ এমন ভাবে ফুলে আছে যেকেউ আমাকে দেখলে ভয় পাবে।
বিশেষ করে আমার বাম হাত এবং পা মনে করেছিলাম ভেঙ্গেই গেছে। কোনোকিছু অনুভব করতে পারছিলাম না পা দুটোতে। তারপর তারা আমাকে ভাত খাইতে দিল ডাল দিয়ে। আমার হাতের আঙ্গুলে একটা আংটি ছিল, মারার সময় হাত দিয়ে ঠেকাতে গিয়ে আংটিটা ভেঙে আমার আংগুলের ভিতর ডুকে যায়।
তারপর অনেক কষ্ট করে সেটা কেটে বের করলো। সকাল থেকে কিছুই খাই নি, তাই যা দিল তা দিয়ে কোনভাবে খাওয়ার পর দুলাভাই আসলো। আমি অনেক আকুতি মিনতি করে বললাম দেখ আমার ভুল হয়েছে, আমাকে তোমরা বাসায় নিয়ে চলো। কিন্তু না, বললো এইখানে তোর আরও ৩/৪ দিন ট্রিটমেন্ট চলবে।
সবাই এত পরিমান কঠোর হয়ে গিয়েছিলো মনে হচ্ছিলো যেন আমি এমন এক পাপ করেছি যার কোন ক্ষমা নাই। এইদিকে আমার শরীরের ব্যথা কোন ভাবে সহ্য হচ্ছে না। তাই তাদের বললাম, দেখ আমার ব্যথা সহ্য হচ্ছে না। তোমরা আমাকে একটা সিগারেট ধরায় দাও।
তারা আমার এই কথায় অবাক হয়ে যায় এত মারার পরও আমি তাদের ভয় পাচ্ছি না, উল্টো সিগারেট চাচ্ছি। দুলাভাই একটা সিগারেট ধরায় দিল। যাক এবার সিগারেট টানলে এই ব্যথার দিকে আর মনোযোগ থাকবে না।
তারপর তারা আমাকে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তখন প্রায় দুপুর ২টা বাজে। এইদিকে পাশের কক্ষে আব্বু আম্মু সহ ওই নেতারা কি যেন আলোচনা করে। কিছুক্ষন পর আবার ছেলেগুলো এসে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে ওই আশ্রমের যে পরিচালক, সেই সাধুর কাছে নিয়ে যায়। সবাই তাকে বাবা বলে ডাকছিলো।
তারপর সেই সাধু অনেক জ্ঞানের কথা বলে। কিন্তু প্রথম দেখাতেই আমি বুঝে গেছি যে এ হচ্ছে বড় লেভেলের ভন্ড সাধু। কিছু পাবলিক থাকে না যে কথা দিয়ে মানুষকে বশ করে ফেলতে পারে এই হচ্ছে ওই পাবলিক। সাধু আমাকে বলে যে, “ধর্ম আবার পরিবর্তন করা যায় নাকি? পানি নিজের ধর্ম ছেড়ে দিলে সে আর কিভাবে পানি থাকে, ঠিক তেমনিভাবে মানুষও নিজের ধর্ম কখনও পরিবর্তন করতে পারে না।”