গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৯
মাঝরাতে গিয়ে চোখে একটু ঘুম আসে। আমার শরীর সুস্থ হওয়ার জন্য প্রচুর ঘুমের দরকার ছিল। যাক তারা অন্তত ঘুমাতে দিল। সকালে ১০ টার দিকে ঘুম থেকে উঠলে দেখি আম্মু পাশে বসে আছেন। কান্না করছেন। আমি কিছু বলি নাই। তারপর আমাকে ধরে নিয়ে মুখ ধোয়ালেন, কিছু নাস্তা করতে দিলেন।
খাওয়া শেষে শুনি আব্বু-আম্মু নাকি চলে যাবে। আমি তাদের পায়ে পড়ে অনেক আকুতি-মিনতি করি কিন্তু না! শেষ-মেষ তারা আমাকে না নিয়েই চলে গেল। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি। এত পরিমান কষ্ট হচ্ছিল বলে বোঝানো যাবে না। কেন তারা এমন করছে? আমি কি এমন অপরাধ করলাম? যার ফলে যে বাবা-মা কখনও আমার উপর রাগ করে কথা বলতো না, তারা আজ আমার এত কান্নার কোন মূল্যই দিলো না।
ভাবলাম হয়তো তাদের শিখিয়ে দিয়েছে যেন উনারা আমার সাথে কঠোর আচরণ করে। কক্ষে বিছানায় শুয়ে আছি আর টেনশন করছি। না জানি আমার সাথে যারা যারা জড়িত তাদের না ধরে ফেলে। তারা যদি আব্বু-আম্মুকে সব বলে দেয়? ইত্যাদি……।
আসলে আমি ইসলামে সব বুঝেশুনেই এসেছি এবং তাদের মিথ্যা বলেছি একথা যদি তারা জানতে পারে তাহলে তো আমাকে আরও মারবে! আমি পাশে বসে আছি আর ছেলেগুলো আর ভন্ড সাধু একটা কাগজে কী কী যেন লিখে রাখছে আর বলাবলি করছে যদি আল্লাহ থাকে তাহলে দুনিয়াতে এত এত ধর্ষণ হচ্ছে? তখন আল্লাহ কই থাকে?
আমি মনে মনে বলছি, আরে বলদ! আল্লাহ যদি সরাসরি জালেমদের পাকড়াও করতো তাইলে তোদের মতো জালেমরা কি রেহাই পাইতো নাকি? কুরআনে আল্লাহ বলেছেন যে তিনি জালেমদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। তিনি মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তুমি পৃথিবীতে ভালো কাজ করবা নাকি আমার নাফরমানি করবা তুমি জানো তোমার সাথে আল্লাহর দেখা হবে কিয়ামতের দিন, দুনিয়া তো কিছুই না।
তিনি চাইলে কি সরাসরি আমাদের সাহায্য করতে পারতেন না? অবশ্যই পারতেন। কিন্তু তাহলে বান্দার জন্য পরীক্ষার আর কী থাকলো? এটাই পরীক্ষা। অতীতে যতো জাতি ধ্বংস হয়েছেন তাদের সবাইকে আল্লাহ নিদর্শন দেখানোর পরও যখন তারা অস্বীকার করেছে তখন আল্লাহ তাদের উপর আসমান থেকে আযাব পাঠিয়েছেন।
দুপুরের খাবার খেতে গেলাম, পাশে সেই নওমুসলিম ভাইও বসেছে। কিন্তু আমি কোন কথা বলি নাই কারণ তারা যদি আবার আমার উপর সন্দেহ করে। খেয়ে আবার একটু রেস্ট নিচ্ছি আর মাথায় শুধু একটাই টেনশন তারা যদি সব সত্য জেনে ফেলে? হঠাৎ কক্ষে ছেলেগুলো ঢুকলো আর আমাকে উঠিয়ে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছিলো। আমি তাদের বলি তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
তাদের যে লিডার সে আমাকে বললো আমার হাত চুলকাছে তাই তোদের নিয়ে যাচ্ছি মন্দিরে। তাদের মধ্যে একজন ছিলো আমার সমবয়সী। তাই তার সাথে কিছুটা ফ্রেন্ডলি হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তাঁকে বললাম, দেখ, তুই একটু এগুলাকে বুঝা আমার শরীরের আর সহ্য ক্ষমতা নাই। তাই আমাকে যেন আর এইভাবে টর্চার না করে।
তারপর কোথায় থেকে একটা গাছের লাঠি জোগাড় করে আমাদের দুইজনকে মন্দিরে নিয়ে যায়। তারপর দুইজনকে পাশাপাশি দুইটা চেয়ারে বসিয়ে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে। আজকে সাধুর ছেলে বসেছে আমাদেরকে নিয়ে। প্রথমে আমার সেই নওমুসলিম ভাইটাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে যে সে কার মাধ্যমে মুসলিম হয়েছে, কে তাকে দাওয়াত দিয়েছে, সে কি কি জানে ইসলাম সম্পর্কে এগুলা জিজ্ঞেস করছে আর গালে জোরে জোরে থাপ্পড় দিচ্ছে। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করা শুরু করে। গতকাল যে প্রশ্নগুলো করেছিল আজকে ঠিক সেই প্রশ্নগুলোই করছে আর গতকালকের জবাবের সাথে আজকের জবাবগুলো মিলছে কিনা সেটা ক্রসচেক করে নিচ্ছে।
আর এমন এমন ইসলাম বিরোধী কথা বলছে আর বাজে বাজে মন্তব্য করছে ইসলাম ও রাসূল সাঃ সম্পর্কে যা চিন্তাও করা যায় না। মুসলিম আর ইসলামের প্রতি তাদের এত পরিমাণ ক্ষোভ! অথচ তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যে প্রশ্নগুলো তুলছিলো সেগুলোর জবাব একটা বাচ্চা ছেলেও দিয়ে দিতে পারবে। তারা ইসলামের ১%-ও জানে না। কিন্তু ইসলামের প্রতি তাদের এত বিদ্বেষ।
কিন্তু আমরা সব জানার পরও কিছু বলতে পারছি না। আর পাশে একজন দাঁড়িয়ে আছে লম্বা-মোটা একটা লাঠি নিয়ে। উত্তর দিতে একটু দেরি করলেই পায়ের রান বরাবর মারছে। গতকাল যে উত্তরগুলো দিয়েছিলাম, আজকেও হুবহু উত্তর দেওয়ার কারণে আমার উপর থেকে তাদের সন্দেহ কিছুটা হালকা হলো।
জিজ্ঞেসাবাদ শেষে আমাদের দুইজনকে নিচে একটা পাটি বিছিয়ে উল্টো করে শুইয়ে হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে একসাথে করে পিচ্চি দুইটা ছেলে আমাদের উপর বসে আছে। আর তারা গাছের লাঠি দিয়ে আমাদের হাত-পায়ের তালুতে যতো জোরে ইচ্ছে ততো জোরে মারছে।
আর বলছে ডাক তোদের আল্লাহকে দেখি কিভাবে তোদের বাঁচায়! নাউজুবিল্লাহ। আর সাথে সাথে এগুলো ভিডিও করছে এবং তাদের সংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপে ভাইরাল করে দিচ্ছে। আমাদের আর্তনাদ মন্দিরের এই চার দেওয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ। হঠাৎ করে সেখানকার এক ব্রাক্ষণ এসে আমাকে বাঁচিয়ে দেয় এবং বলে ওকে মারতে হলে আমার শরীরের উপর দিয়ে মারতে হবে। তাই আজকের মতো এখানেই ছেড়ে দিল তারা।