গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-১০
এবার আমাদের চেয়ারে বসিয়ে একা মন্দিরে রেখে তারা চলে গেল।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমরা বসে আছি আর মশার কামড় খাচ্ছি। নওমুসলিম (জয়ন্ত) ভাইয়ের সাথে প্রথম কথা আজকে। আমাকে বললো ভাই আপনাকে তো তাদের একজন এসে বাঁচাইছে তাদেরকে বলেন না আমাকে আর না মারতে আমি তো তাদের সব সত্যিই বলে দিয়েছি।
আমি বললাম, আপনাকে কীভাবে বাঁচাবো ভাই আমি নিজেই তো মার খাচ্ছি। এর কিছুক্ষন পর তারা এসে আমাদের নিয়ে যায়। আর সাধুর ছেলেও সাধুর মতো চাপাবাজ। ইসলাম নিয়ে তার বিন্দু পরিমান জ্ঞান নেই।
ইসলাম বিদ্বেষীদের ইসলাম নিয়ে এত বিরোধিতার একটা মূল কারণ হলো তারা ইসলাম নিয়ে পুরোপুরি জানতে চায় না। আংশিক কথা জেনেই তারা ইসলাম নিয়ে বিরোধীতা শুরু করে দেয়। যেমন তারা রাসুল (সাঃ) এর একাধিক বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুললো তার কারণ তারা রাসুল (সাঃ) এর জীবনী ধরেও দেখে নাই।
রাসুল (সাঃ) ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত মা খাদিজা (রাঃ) এর সাথে সংসার করেন। নিজের পুরোটা যৌবন তিনি মা খাদিজার সাথে কাটিয়েছেন। আর জীবনের শেষের ১০ বছরে তিনি দ্বীনের স্বার্থে যে বিবাহগুলো করেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন তালাক প্রাপ্তা অথবা বিধবা। রাসুল (সাঃ) এর কোনো স্ত্রীর উনাকে নিয়ে বিন্দু পরিমাণ অভিযোগ ছিল না। তাহলে সেখানে আপনি উনার বিবাহ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কে?
তাদের সব প্রশ্নের জবাব আমার কাছে থাকার পরও কিছুই বলতে পারছিলাম না কারণ যত কিছুই হোক তারা বলবে বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার।
এভাবে অনেকক্ষণ মুখে চাপাবাজি করলো আর আমরা শুধু তাদের কথায় সুর মিলাচ্ছি। তারপর আমাদের উঠিয়ে নিয়ে কক্ষে রেখে আসলো। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো আমাদের অবস্থা দেখে কিছুটা গরম হয়ে বললো ওদের এই অবস্থা কে করলো? তারপর ইঞ্জেকশন দিয়ে আরও কিছু ওষুধ লিখে দিল।
এদিকে আমাদের আগের ব্যাথাগুলো তো আছেই তার উপর আবার নতুন ব্যাথা। আমার হাত ও গোড়ালি অনেক কালো হয়ে যাওয়ায় তারা ভয় পায়। একটা হাতুড়ে ডাক্তার আনে আর আমার হাত এবং পা মলম দিয়ে মাসেহ করে দেয় আর বসিয়ে দেয়। আরেকটা মলম দিয়ে হাত এবং পায়ে প্রতিদিন মালিশ করতে বলে।
এত পরিমাণ ব্যাথা লাগছিল ঠিক করার সময়, কিন্তু তবুও একটু ব্যাথা কমেছিল। হাত আর পায়ের ব্যাথার কারণে ঘুমাতে পারছিলাম না। তাই গামছা দিয়ে হাত গলার সাথে বেধে নেই, যাতে ঘুমন্ত অবস্থায় এদিক ওদিক হয়ে না যায়।
ছেলেগুলো আমার পাশে বসে আমাদের মারার ভিডিওগুলো দেখছিল আর হাসাহাসি করছিল। তারা বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলোতে আমাদের ভিডিও ভাইরাল করেছিল। আর প্ল্যান করেছিলো যে পরেরদিন সকালে আমাদের ডিম থেরাপি দিবে। এই উদ্দেশ্যে তারা ২টা ডিম সিদ্ধও দিলো রাতে। আমি যখন শুনলাম পুরো রাত আমার টেনশনে কাটলো। আগামীকাল না জানি আমাদের সাথে কি হয়! আজকের রাতও ঠান্ডায়-ব্যাথায়-যন্ত্রণায় কাটলো। কোনোমতে জোর করে ঘুমালাম।
প্রতিদিন সকাল ৭ টায় এরা উপাসনালয়ে যায়। আমরা অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন আমাদের আর ডাকে না। প্রতি সকালে এক মুঠ মুড়ি আর চা খেতে দেয়। প্রতিদিন সকাল থেকে শুধু টেনশন কাজ করে; না জানি আজকে কি করে আমাদের সাথে।
পরেরদিন সকাল ১১ টার দিকে আমাদের নিয়ে আবার বসে। তখন শুনি আমাদের জন্য যে দুইটা ডিম সিদ্ধ দিয়েছিল তা নাকি কে যেন খেয়ে ফেলেছে। এটা শুনে অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ি। তবুও তাদের মানসিক টর্চার তো আর থেমে নেই। নবী কারিম (সাঃ) কে নিয়ে এত বাজে বাজে মন্তব্য, কটুক্তি যা কোন সাধারণ মুসলিম যদি শুনে তার মাথায় রক্ত উঠে যাবে। আমি মনে মনে বলতাম এরা কি এগুলোর শাস্তি ও পরিণতি সম্পর্ক জানে না?
অবশ্য এরা জানবে কিভাবে সেই যোগ্যতাই তো এদের নেই। যাক আজকের মতো কিছু চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দিল। চাইলে এদের প্রত্যেকের নাম আমি উল্লেখ করতে পারতাম। কিন্তু না, এরা জম্মেছে জা*জ সন্তান হিসেবে দুনিয়ার অজান্তেই, আর মরবেও কুকুরের মতো দুনিয়ার অজান্তেই।