গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-১১
কিছুক্ষণ পর দেখলাম ছেলেগুলো নাকি কোনো একটা কাজে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। যাক বাঁচলাম এদের ঝামেলা থেকে! কিন্তু তবুও সারাক্ষণ মাথায় টেনশন কাজ করতো যে না জানি আমার মা-বাবা কী কী করছে এইখানে? তারা যদি আমার ফ্রেন্ডদের ধরে ফেলে আর আমার সব সত্যি জেনে যায় তাহলে তো বিপদ।
আর এখান থেকে পালানোর কোন সুযোগও নাই। সাধু এমন এমন ভয় দেখাইছে যদি ধরে ফেলে তাহলে আর রক্ষা নাই। আর এখান থেকে চট্টগ্রাম যেতে হলে আমাকে একটা ঘাট পাড় হতে হবে। আর সেখানে তাদের লোক আছে যাওয়া মাত্র ধরে ফেলবে। এইখানে এসে প্রথম দিনেই আমি এটুকু বুঝতে পেরেছি যে এখানে আমার উত্তেজিত হয়ে কিছু করলে চলবে না। বরং আমাকে আকল , ধৈর্য্য এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস এগুলো দিয়ে প্রত্যেকটা কদম ফেলতে হবে। এক কদম এদিক-ওদিক হলে আর বের হওয়া সম্ভব না। তাই প্রথম দিন থেকেই আমি এমন ভাবে চলা শুরু করেছি যাতে এদের আমার উপর আর কোনো প্রকার সন্দেহ না থাকে।
দুপুরের খাবার-ওষুধ খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি আর ভাবছি হায় আল্লাহ, আপনি কেন আমাকে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন করলেন? আমি কি এমন ভুল করলাম? মাঝে মাঝে ভাবি আসলেই কি আমি সঠিক রাস্তায় আছি? এমন নানান প্রশ্ন মনে আসছে, আল্লাহ আমাকে কেন সাহায্য করছেন না? আমি কি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবো? আমার তো সবকিছুই আছে তাহলে কেন আমি আমার আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে ধর্ম নিয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছি? এমন অনেক ওয়াসওয়াসা শয়তান আমাকে দিচ্ছিল যে আমার ঈমান আছে নাকি নাই তা নিয়ে সন্দেহে পড়ে গিয়েছিলাম।
কিছুক্ষণ পর দুইটা পিচ্চি ছেলে এসে বলে যে সাধুর ছেলে ডাকছে। পিচ্চি ছেলে দুইটা হচ্ছে এখানকার সিসিটিভি ক্যামেরা। কে কি করছে, কোথায় কি হচ্ছে সব খবর তাদের কাছে থাকে, এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো কিছু করা অসম্ভব। এমনিতে হাত-পা এর ব্যাথার জন্য হাঁটাচলা করতে পারি না তার উপর কিছুক্ষণ পর পর ডাকে, বিরক্ত লাগলেও কিছু করার নাই।
সেখানে যাওয়ার পর আমাদের নিয়ে বসে সেইরকম ব্রেইনওয়াশ করা শুরু করলো। সেই ইসলাম বিদ্বেষী কথাবার্তা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে নানান কটুক্তি, তারপর হিন্দু ধর্ম নিয়ে নানান অপব্যাখা যা সনাতন ধর্মের কোন গ্রন্থেই নেই। সব তাদের নিজেদের বানানো অপব্যাখ্যা আমাদের মাথায় সেট করার চেষ্টা করছে।
আমি একটা জিনিস সবার ক্ষেত্রেই খেয়াল করলাম যে যারা ইসলাম নিয়ে মনে বিদ্বেষ লালন করে তারা বেশির ভাগ নিজ ধর্ম সম্মন্ধে তেমন কোন জ্ঞান রাখে না। নিজের মন গড়া যুক্তি দিয়ে ধর্মকে ব্যাখা করে। তাদের আপনি যতই দলিল, যুক্তিপ্রমাণ দেখান না কেন তাদের অহংকার তাদেরকে সত্য গ্রহণ করতে দিবে না।
আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারাহর ০৬ নং আয়াতে বলেন,
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَآءٌ عَلَيۡهِمۡ ءَأَنذَرۡتَهُمۡ أَمۡ لَمۡ تُنذِرۡهُمۡ لَا يُؤۡمِنُونَ
নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য উভয়ই সমান; তুমি তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করো বা না করো, তারা ঈমান আনবেনা।
এর পরের আয়াতে বলেন,
خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ وَعَلَىٰ سَمۡعِهِمْۖ وَعَلَىٰٓ أَبۡصَٰرِهِمۡ غِشَٰوَةٌۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٌ
আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহের উপর ও তাদের কর্ণসমূহের উপর মোহরাংকিত করে দিয়েছেন এবং তাদের চক্ষুসমূহের উপর আবরণ পড়ে আছে এবং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি।
সন্ধ্যায় উঠানের মাঝখানে চেয়ার নিয়ে আমি আর ওই নওমুসলিম ভাই বসে আছি। তিনি আমার থেকে দুই বছরের ছোট, এসএসসি দিবে একমাস পর। আশেপাশে পিচ্চি দুইটা ছিলোনা, সবাই মনে পূজা করতে ব্যস্ত। প্রথম প্রথম আমরা শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় উপাসনালয়ে যাওয়ার জন্য এতো জোরাজোরি করতো না।