গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-১৩
সাধুর মাইর যখন শেষ তখন মারা শুরু করে আপনাকে যে মারছে সে। আমি কোনমতে আমার কানগুলো ঢেকে রাখি তা না হলে আমার মাথা ফাটায় দিতো। আপনাকে যে নেতা জিজ্ঞাসাবাদ করছিলো সে বলেছিলো তোর কোন বাপ তোকে ইসলাম গ্রহণ করাইছে তাকে ডাক। বাকি আমার শরীরের অবস্থা দেখে তো বুঝেই গেছেন।
তার কথা শুনে আমি হা হয়ে আছি। বললাম ভাই আপনি তো আমার চাইতেও বড় ঝড়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। ভাই তারপর জিজ্ঞেস করলো, তো এখন আপনার চিন্তাভাবনা কি? আবার আগের লাইফে ফিরে যাবেন? আপনার আব্বু-আম্মুর তো সব আছে আপনাকে যা ইচ্ছা তাই দিবে বললো। শুধু যা হওয়ার কবরে হবে এই আর কি!
আমি বললাম আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করছেন না কেন? উনার কাছে এতো সাহায্য চাওয়ার পরও আমি এমন কি করলাম যে আমাকে এই বিপদে ফেললেন? আমার ঈমান একদম দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো। তার উপর এরা যেভাবে মানসিক নির্যাতন করা শুরু করেছে। ধর্ম নিয়ে ওদের মধ্যে এত উগ্রবাদ কেন? তাও শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে?
ভাই আমাকে শান্ত করলেন। তারপর বুঝালেন, ভাই দেখেন যখন ঈমানের পথে আপনি চলতে শুরু করবেন তখন এমন অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে যা আপনি হয়তো আগে কখনও কল্পনাও করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“লোকেরা কি মনে করে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে? আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?” [সূরাঃ আল আনকাবুতঃ ০২]
প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে আল্লাহ পরীক্ষা করবেন যে, বান্দা কি আসলেই আমার উপর ঈমান এনেছে নাকি শুধু মুখেই বলেছে আমরা ঈমান আনলাম। এই পরীক্ষা দিয়েই ঈমানদার আর মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়। আর এই ঈমানি পরীক্ষায় যদি আপনি পাশ করেন তাহলে আল্লাহ আপনার জন্য তৈরী করে রেখেছেন চিরস্থায়ী জান্নাত। এই পরীক্ষায় পাশ করার জন্য আপনাকে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল করতে হবে আর ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। ‘ (সুরাঃ বাকারা, আয়াতঃ ১৫৩)।
তাই আমাদেরকেও ধৈর্য্য এবং সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে তাহলেই তিনি আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন ইনশাআল্লাহ।
ভাইয়ের কথাগুলো যখন শুনলাম মনে হলো যেন আবার ঈমান ফিরে পেলাম। আমি জানি না কিন্তু মনে হলো ভাইকে হয়তো আল্লাহ আমার ঈমান হেফাজত করার জন্যই পাঠিয়েছেন। ভাইয়ের কাছে আবার কালেমা পড়লাম।
তারপর ভাইয়ের সাথে আরও কিছুক্ষণ গল্প করলাম। ভাই বললো, জানেন ভাই শেষ জামানায় কেন মুসলমানরা মাইর খাবে তা আমি এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। ফিলিস্তিনের মুসলিমদের কথা যখন আসে তখন আমরা একেকজন ফেসবুক গরম করে ফেলে কিন্তু ঘরের পাশেই যে তার এক মুসলিম ভাই মাইর খাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে তার খবর কে রাখছে? অনেকে এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।
আমি একবার এক সিএনজি ড্রাইভারের কাছে সব বললাম। সে বললো, এইখান থেকে বের হতে হইলে ঘাট পার হওয়া লাগবে কিন্তু সেখানে তো তাদের লোক। তার সাথে কথা বলার সময় পিচ্চি দুইটা ছেলে আমাকে দেখে ফেলে। অনেক কষ্টে তাদের থামাই। নয়তো ওইদিনই আমি শেষ। সবার আগে এই পিচ্চিগুলোর থেকে আমাদের সাবধান থাকা লাগবে কারণ ওদের দেখতে ছোট হলেও ওরা অনেক চালাক।
আমার আবার আরেকটা টেনশন এখান থেকে কোনভাবে যদি পালিয়ে বাঁচিও তাহলেও কিভাবে নিজের পেট চালাবো? আমি তো কোনো চাকরি করি না, তাহলে কি করব? তখন সেই ভাই আমাকে বুঝালো, ভাই দেখেন রিজিক একমাত্র আল্লাহর হাতে। আমাকে যখন আমার আব্বু প্রথমে মেরে ঘর থেকে বের করে দেয় তখন রিজিক নিয়ে আমার বিন্দু পরিমাণ চিন্তা ছিলো না। আল্লাহ কিন্তু ঠিকই আমার রিজিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার রিজিকে যতটুকু লেখা আছে তা না খেয়ে আমি দুনিয়া থেকে যাবো না।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে; আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।‘
(সুরা তালাকঃ আয়াত ৩)
তাই রিজিকের জন্য সবসময় আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবেন। তাহলে দেখবেন এমন এমন জায়গা থেকে রিজিক আসছে যা আপনি চিন্তাও করেননি। কোন মানুষ দুনিয়ার যত বড় ধনী হোক না কেন যদি কারো ঈমান না থাকে তাহলে তার কাছে কিছুই নাই।
তার প্রত্যেকটা কথা শুনে আমার ঈমানি শক্তি ফিরে আসে। ধরে নিয়েছিলাম আল্লাহ যেহেতু হাত-পা দিয়েছেন তাই কোনো একটা চাকরি করে চালিয়ে নিবো ইনশাআল্লাহ। তার এই কথার পর থেকে আলহামদুলিল্লাহ রিজিকের জন্য আমি আর কখনও চিন্তিত হই নাই এখন পর্যন্ত।