গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-১৪
এখানে পাহাড়ের নিচে একটা মসজিদ আছে। আমাদের পরিকল্পনা ছিলো এমন যে যদি এরা আমাদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে সোজা মসজিদে চলে যাবো। তারপর সেখানকার ইমামের কাছে অথবা নামাজের সময় গেলে মুসল্লিরা আমাদের সেফটি দিবে। এখন বাঁচার সম্বল শুধু মসজিদ, আল্লাহর ঘর।
তখন আমাদের এমন একটা অবস্থা হয়েছিলো যে মুসলমান চোখে পরলেই মনে হতো এতো আমার নিজের আপন ভাই। তাকে গিয়ে সব বলি, সে আমাদের সাহায্য করবে অবশ্যই। পাহাড়ের নিচে রাতে আবার শান্তি বাহিনীর আনাগোনা তাই রাতে পালানো যাবে না। এগুলো আলোচনা করতে করতে হঠাৎ সাধু ডাক দিয়ে বলে কিরে তোরা দুইজন একা বসে কি আলাপ করছ? তারপর ওইখান থেকে যার যার কক্ষে চলে যাই।
রাতে খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিবো। মাথায় এখন আর টেনশন রেখে কোন লাভ নাই যা করার কোনোভাবে চট্টগ্রাম যাওয়ার পরে করবো। আগে এখান থেকে বের হই তারপর। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছি, হায়! সবাই কি আমাকে ভুলে গেছে? কেউ একটাবার খবরও নিচ্ছে না! সবাই আমাকে ভুলে নিজ নিজ জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
যাদের জন্য এতো কিছু করলাম জীবনে, নিজে মাইর খেয়েও তাদের নাম মুখে আনলাম না আজকে তারা আমার একটু খবরও নিচ্ছে না। কোথায় আছি,কিভাবে আছি? কোনো খবর নিচ্ছে না। নিজের পরিবারের মানুষ যেখানে আমাকে এই জাহান্নামিদের মাঝে ফেলে গেল সেখানে তারাই বা কি করবে? এটাই বাস্তবতা।
এই বাস্তবতার শিকার একদিন আমরা সবাই হবো এবং সেই জায়গা হলো কবর। আপনি যখন কবরে যাবেন তখন সবার জীবন স্বাভাবিক গতিতেই চলবে, শুধু থাকবেন না আপনি। একা ওই অন্ধকার কবরে সাথে থাকবে শুধু আপনার ঈমান,আমল। আপনি যে স্ত্রী-সন্তানের জন্য সুদের টাকা, হারাম টাকা কামাই করেছেন তারা ঠিকই আপনাকে অন্ধকার কবরে একা ফেলে নিজ নিজ জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
কিন্তু তার বিপরীতে আপনার স্ত্রী সন্তান যদি দ্বীনদার হয়, আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে দেখবেন কবরে গিয়েও আপনি নেকি পাচ্ছেন। আজকে আর এতো কিছু চিন্তা করতে ভালো লাগছে না! মনে হচ্ছে দুনিয়ার এই সফরে অনেক ক্লান্ত এক মুসাফির। আমার এখন একটু বিশ্রাম দরকার। শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে।
দেখতে দেখতে ১৪ দিন পর আমি কিছুটা সুস্থ হই। হাঁটাচলা, হাত-পা মোটামোটি নাড়াতে পারছি। যখন দেখলো আমরা সুস্থ হলাম শুরু হয়ে গেল আমাদের দিয়ে কাজ করানো। সেই সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠায় দিতো একটা বুড়া। বুড়া আগে স-ন্ত্রা-স ছিল। আমার সাথে মাঝে মাঝে গল্প করে “আমি মুসলিমদেরকে দুই চোখে দেখতে পারি না। আমি নিজ হাতে ২টা মুসলিম কে গু-লি করছিলাম। আমার বাসায় এখনও **47 আছে।
তারপর পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর থেকে এখানে থাকি। যাক! সকালে উপাসনা শেষে সব ভন্ড সাধুকে প্রণাম করতে যায়। এখানে যতগুলো ছেলে আছে সব পাহাড়ি এবং খ্রিস্টান, বৌদ্ধ পরিবারের। কিন্তু এখানে ফ্রিতে খাবার পাচ্ছে বলে হিন্দু হয়ে এখানে থাকছে। ফ্রিতে বললে ভুল হবে। থাকা খাওয়ার বদলে দুনিয়ার যতো কাজ আছে সব তাদের দিয়ে করায় দুইবেলা খাবারের বিনিময়ে। এর চাইতে কম কষ্ট করে মানুষ আরও আরামে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
আমাদের দিয়ে কাজ করানো শুরু হলো। সকালে উপাসনা শেষে পুরো উঠান ঝাড়ু দেওয়া, ফুল তুলা, বাসন মাজা ইত্যাদি। তারপর এক কাপ চা আর এক মুঠ মুড়ি দিত খেতে। আমাদের মতো একজন নওমুসলিম বোন ছিল উনি আসলে একজন মুসলিম ছেলেকে ভালোবাসতো, তারপর এখানে। অনেক ভালো রান্না করতে পারে। তাই রান্নার সব কাজ উনাকে দিয়ে করায়।
তাই মাঝে মাঝে উনাকে বলে লুকিয়ে কয়েকটা বিস্কুট খেতে পারতাম। তারপর খাওয়া শেষে পাহাড়ি ছেলেদের সাথে যত ভারী কাজ আছে সব করতাম। লাকড়ি ফালা করা, খেড় কুরা, গরু চড়ানো তাদের খাবার খাওয়ানো, গাছ কাটা, জঙ্গল কাটা, সেই পাহাড়ের নিচ থেকে বড় বড় গাছগুলো কাঁধে করে নিয়ে আসা, বালু-সিমেন্টের বস্তা এগুলা নিয়ে আসা, আরও যতো ভারী ভারী কাজ আছে সব আমাদের দিয়ে করাতো।
প্রথম প্রথম কষ্ট হতো কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের সাথে কাজ করতে করতে শিখে ফেলি সব। কাজ করতে আমার কোন সমস্যা নাই। যতো ইচ্ছা কাজ করাক সমস্যা নাই কিন্তু অন্ততপক্ষে যেন না মারে। সামনে এমনিতেই আমার জন্য একটা কঠিন জীবন অপেক্ষা করছে! নিজেকে না হয় এখন থেকে তৈরি করি।
পাহাড়ি ছেলেদের সাথে আমাদের একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আমাকে ওরা *** দাদা বলে ডাকতো। কাজ করার পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন গল্প করতাম। আশ্রম, সাধু এদের ইতিহাস জানতাম কেন এখানে নওমুসলিমদের উপর এতো নির্যাতন করে? এখানকার মুসলিমরা কি এসব দেখে না? তারপর এমন এমন ইতিহাস জানলাম যা বলার বাইরে।
এদের সাধারণত বিভিন্ন জেলায় সংগঠন আছে। আর আশ্রমের লোকেরা অন্যায়, অনৈতিক ও অসাধু কার্যক্রম-এর সাথে জড়িত। এখানকার মুসলিমরা এসব জানে না।
আমাদের আগেও এখানে অনেক নওমুসলিমদের এনেছে এবং নানাভাবে নির্যাতন করেছে।