বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-২)
আমরা ৬ ডিসেম্বর এর আগের রাত্রে বাবরি মসজিদের একেবারে কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছি এবং বাবরি মসজিদের সামনে কিছু মুসলমানদের বাড়ির ছাদে রাত কাটাই। আমার বারবার মনে হতো না জানি আমাদেরকে ৩০ শে অক্টোবর এর মত আজও এই শুভ কাজ হতে বঞ্চিত হতে হয়। কয়েকবারই মনে হয়েছে লিডার না জানি কি করেন, আমাদের নিজেদের গিয়েই কর সেবা শুরু করা উচিত। কিন্তু আমাদের সঞ্চালক আমাদের বাধা দিলেন এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে থাকতে বললেন। আমি তার ভাষণ শুনতে শুনতে ঘরের ছাদ থেকে নেমে এলাম এবং কোদাল হাতে বাবরি মসজিদ ভাঙতে অগ্রসর হলাম।
আমার মনস্কামনা পূরণের সময় এসে গেল। আমি মাছের গম্বুজটির উপর কোদাল দিয়ে আঘাত হানলাম এবং রামের নামে জোরে জোরে ধ্বনি দিলাম। দেখতে না দেখতেই মসজিদ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেল। মসজিদ ভেঙে পড়ার আগেই আমরা নিচে নেমে পড়ি। আমরা খুবই আনন্দিত ছিলাম। রামলীলা লাগানোর পর তার সামনে মাথা ঢুকিয়ে আমরা আমাদের বাড়িঘরে ফিরে এলাম। সাথে নিয়ে এলাম মসজিদের দু টুকরো করে ইট। যা আমরা খুশি মনে আমাদের পানিপথের সাথীদের দেখালাম। তারা আমাদের পীর চাপরে আমাদের কৃতিত্বে আনন্দ প্রকাশ করল। শিবসেনার দপ্তরেও দুটো ঈদ রেখে দেয়া হয়। এরপর এক বিরাট সভা হয় এবং সকলেই তাদের বক্তৃতায় অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আমার প্রশংসা করে। আমি আমার বাড়ি গিয়ে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে এ কথা বলেছিলাম।
আমার পিতা খুবই অসন্তুষ্ট হন এবং এ ব্যাপারে তার গভীর দুঃখের কথা জানিয়ে আমাকে পরিষ্কার বলে দেন যে এখন আর এই ঘরে আমি আর তুমি দুজন একসঙ্গে থাকতে পারিনা। তুমি থাকলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব, নইলে তুমি আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। মালিকের ঘর যে ভেঙেছে আমি তার মুখ দেখতে চাই না। আমার মৃত্যু পর্যন্ত তুমি তোমার মুখ কখনো আমাকে দেখাবে না। আমি ধারণাও করতে পারিনি এমনটা ঘটবে। তিনি আমাকে এও বললেন যে, এ ধরনের জালিমদের ধরুন এদেশ ধ্বংস ও বরবাদ হয়ে যাবে। আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললাম আপনি বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। আমি নিজেই এক এ বাড়িতে থাকতে চাই না যেখানে একজন রাম মন্দির ভক্তকে জালিম মনে করা হয়। এরপর আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসি এবং পানিপথে থাকতে শুরু করি।
আমার বন্ধু যোগিন্দর বাবরি মসজিদের কিছু ইট এনে রেখেছিল এবং মাইক দিয়ে ঘোষণা দেয় যে, হিট গুলো রাম মন্দিরের উপর নির্মিত অবকাঠামোর। সৌভাগ্যক্রমে তা আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। সমস্ত হিন্দু ভাই এসে যেন এর উপর প্রস্রাব করে। ঘোষণা হতেই ভিড় লেগে গেল। যেই আসতো ঘৃণা ভরে এর উপর প্রস্রাব করে যেত।
এবার আল্লাহ তাআলা নিজের কুদরত দেখালেন। চার পাঁচ দিন পর যোগিন্দরের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। সে পাগল হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ উলঙ্গ থাকতে শুরু করে। পরনে আদৌ কাপড় রাখত না। সে ছেলে জমিদারের একমাত্র পুত্র। পাগলামির পর্যায়ে সে বারবার তার মাকে কাপড় খুলে তাকে মুখ কালো করতে বলতো। তারপর ওই অবস্থায় মাকে জড়িয়ে ধরতো। এতে তার পিতা খুবই পেরেশান হয়ে পড়ে।
ছেলের সুচিকিৎসার জন্য সাধু সন্ন্যাসী ও আলেম-ওলামা দেখান। বারবার মহান মালিকের কাছে মাফ চাইতে থাকেন। দান-খয়রাত করতে থাকেন। কিন্তু তার অবস্থার কোন উন্নতি না হয়ে বরং আরো খারাপ হতে থাকে। একদিন তিনি বাহিরে যেতেই সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। মা চিৎকার করতে শুরু করলে মহল্লাবাসী ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে। এরপর থেকে তাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়।
যোগিন্দরের পিতা ছিল খুবই সম্মানিত লোক। তিনি এই ঘটনার কথা শুনে ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময় কেউ একজন তাকে বলে যে এইখানে সোনিপথে ঈদগাহের পাশে একটি মাদ্রাসা আছে। ওখানে একজন বড় মাওলানা সাহেব এসে থাকেন। একবার গিয়ে তার সঙ্গে আপনি দেখা করুন। এরপর যদি কিছু না হয় তখন যা হয় করবেন।