বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-৪)
এরপর চৌধুরী সাহেব আবার মাওলানা সাহেবের পায়ের ওপরে পড়ে গেলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন জি আমার যদি এই ক্ষমতা থাকতো তাহলে কি আমাকে এই দিন দেখতে হতো! আপনি মালিকের আপনজন। যা কিছু করার আপনিই করুন।
মাওলানা সাহেব তখন তাকে বললেন আপনি আমার কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এখন যেই চিকিৎসার কথা আমি বলছি তা আপনার করা উচিত। এবার তিনি সম্মত হলেন। মাওলানা সাহেব মসজিদে গেলেন। নামাজ পড়লেন। অল্প সময়ের জন্য উপস্থিত লোকদের সামনে বক্তৃতাও দিলেন এবং দোয়া করলেন। মাওলানা সাহেব সকলকেই চৌধুরী সাহেবের জন্য দোয়া করতে বললেন। প্রোগ্রাম শেষ হবার পর মসজিদে নাস্তা হল। নাস্তা থেকে মুক্ত হবার পর মসজিদ থেকে বের হতেই আল্লাহর কি মেহেরবানী দেখুন, যোগিন্দর তার পিতার মাথা থেকে পাগড়ি টেনে নিয়ে তার উলঙ্গ শরীর ঢাকলো এবং দিব্যি সুস্থ মানুষের মতো তার পিতার সাথে কথা বলতে লাগলো!
সকলেই এই দৃশ্য দেখে আনন্দিত হলেন। বুওয়ানার ইমাম সাহেবের খুশির তো অন্ত ছিল না। তিনি চৌধুরী সাহেবকে তার প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং তাকে এও বলে ভয় দেখালেন যে, যেই মালিক তাকে ভালো করে দিয়েছেন যদি তুমি ওয়াদা মাফিক মুসলমান না হও তাহলে সে আবার এর চেয়ে আরো বেশি মারাত্মক পাগল হতে পারে। চৌধুরী সাহেব তৈরি হলেন এবং ইমাম সাহেবকে বললেন, মাওলানা সাহেবের ঋণ আমার সাত পুরুষ পর্যন্ত শোধ করতে পারবে না। আমি আপনার গোলাম। আপনি যেখানে চান আমাকে বিক্রয় করতে পারেন। হযরত মাওলানা এ কথা শুনতেই ইমাম সাহেব তার সুস্থ হবার ব্যাপারে যে এ ধরনের ওয়াদা নিয়েছিলেন, তাতে ইমাম সাহেবকে বোঝালেন যে, এ ধরনের কাজ ঠিক নয়, তাকওয়া পরিপন্থী।
এরপর চৌধুরী সাহেবকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হতেই যোগিন্দর তার পিতাকে জিজ্ঞেস করল, পিতাজী আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন মুসলমান হতে। তখন যোগিন্দর বলল, আমাকে তো আপনার আগে মুসলমান হতে হবে এবং আমাকে বাবরি মসজিদ পুনর্বার অবশ্যই নির্মাণ করতে হবে।
তারপর তারা উভয়ে খুশি মনে ওযু করলেন। তাদেরকে কালেমা পড়ানো হলো। পিতার নাম মোহাম্মদ ওসমান এবং পুত্রের নাম মোহাম্মদ ওমর রাখা হলো। এরপর তারা খুবই খুশি হয়ে নিজেদের গ্রামে ফিরে গেলেন। গ্রামে একটি ছোট মসজিদ ছিল। তারা মসজিদের ইমাম সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। ইমাম সাহেব স্থানীয় মুসলমানদেরকে তাদের পিতা পুত্রের মুসলমান হবার কথা জানিয়ে দিলেন। ফলে এক দুজনের কাম থেকে গোটা এলাকায় একথা ছড়িয়ে পড়ল।
হিন্দুদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে এলাকার প্রতাপশালী হিন্দুদের এ নিয়ে মিটিং হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, তাদের দুজনকেই রাতের বেলা মেরে ফেলতে হবে। অন্যথায় তারা কত লোকের ধর্ম নষ্ট করে দেবে। তাদের এই মিটিংয়ে একজন ধর্মত্যাগী মুরতাদ উপস্থিত ছিল। সে ইমাম সাহেবকে গোপনে তাদের চক্রান্তের কথা জানিয়ে দেয়। ফলে আল্লাহর মেহেরবানীতে রাতের অন্ধকারে তাদেরকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয়। তারা ফুলাত দিয়ে পৌঁছেন। পরে তাদেরকে ৪০ দিনের জন্য তাবলীগ জামাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আমির সাহেবের পরামর্শে যোগিন্দর তিন চিল্লাও দেয়। পরে যোগিন্দরের মাও মুসলমান হয়ে যায়।