বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-৫)
অতঃপর যোগিন্দর (মোহাম্মদ ওমর) এর বিয়ে হয় দিল্লির এক ভালো মুসলিম পরিবারে। এখন তারা বেশ আনন্দের সঙ্গেই দিল্লিতে সপরিবারে বসবাস করছেন। গ্রামের জায়গা জমি ঘর বাড়ি সব বিক্রি করে তারা দিল্লিতে একটি কারখানা দিয়েছেন।
রবীন্দ্র এর ঘটনাটা আমার ইসলাম গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত তাই প্রথমে এটা শোনানো হয়েছে। ১৯৯৩ সালের ৯ই মার্চ আমার পিতা অকস্মাৎ হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। বাবরি মসজিদের শাহাদাত এবং তাতে আমার অংশগ্রহণ তাকে খুবই আঘাত দিয়েছিল। তিনি প্রায় আমার মাকে বলতেন মালিক আমাকে মুসলমানদের মধ্যে জন্ম দিলেন না কেন? আমি যদি মুসলমানদের ঘরে জন্ম নিতাম তাহলে অন্তত জুলুম নিপীড়ন সহ্যকারীদের তালিকায় আমার নাম থাকতো। তিনি আমার পরিবারের লোকদেরকে ওসিয়াত করেছিলেন আমি মারা গেলে আমার লাশের খাটিয়ার কাছে যেন বলবীর না আসে। প্রথা ও রেওয়াজ মাফিক আগুনে যেন পোড়ানো না হয়। হিন্দুদের শ্মশানে যেন না নেওয়া হয়।
পরিবারের লোকেরা তার অন্তিম ইচ্ছা মোতাবেক সবকিছু করে। ৮ দিন পর আমি আমার পিতার মৃত্যুর খবর পাই। এতে আমার মন ভেঙে যায়। তার মৃত্যুর পর বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা আমার কাছে জুলুম মনে হতে থাকে এবং গর্বের পরিবর্তে আফসোস হতে থাকে। আমার দিল যেন হঠাৎ দপ করে নিভে যায়। আমি বাড়ি গেলে মা আমার পিতার কথা স্মরণ করে কাঁদতে থাকেন এবং বলতে থাকেন যে, এমন দেবতার মত বাপকে তুই কষ্ট দিয়ে মেরে ফেললি! তুই কতটা নীচ ও হীন জাতের মানুষ। মায়ের এ ধরনের আচরণের কারণে আমি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেই।
জুন মাসে মোঃ ওমর তাবলীগ জামায়াত থেকে ফিরে এলো। সে পানিপথে আমার সঙ্গে দেখা করলো এবং তার পুরো ঘটনা আমাকে বলল। বিগত দুমাস থেকে আমার মন সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকত। না জানি কোন আসমানী বালা মুসিবত আমার ওপর এসে পড়ে। পিতার দুঃখ ও মন কষ্ট এবং বাবরি মসজিদের শাহাদাতের ধরুন আমার মন সবসময় সন্দিগ্ধ থাকতো। মোহাম্মদ ওমরের কথা শুনে আমি আরো বেশি পেরেশান হয়ে পড়লাম। ওমর ভাই আমাকে আরো বেশি জোর দিলেন আমি যেন ২৩ শে জুন যখন সোনিপথে মাওলানা সাহেবের সাথে অবশ্যই দেখা করি। আরো ভালো হয় যদি তার সঙ্গে আমি কিছুদিন থাকি।
আমি প্রোগ্রাম বানালাম। কিন্তু আমার পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়। ওমর ভাই আমার আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং মাওলানা সাহেবকে আমার অবস্থা সম্পর্কে সব বলেছিলেন। আমি সেখানে গেলে মাওলানা সাহেব আমাকে সাগ্রহে কাছে টেনে নিলেন এবং বললেন, আপনার আন্দোলনে এই গুনাহ করার জন্য যোগিন্দরের সঙ্গে যদি সর্বময় মালিক এরূপ করতে পারেন তাহলে আপনার সঙ্গে ও একই রূপ ব্যবহার করা হতে পারে। আর মালিক যদি এই জগতে শাস্তি নাও দেন তাহলে মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী জীবনে যেই শাস্তি মিলবে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
এক ঘন্টা সাথে থাকার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আসমানী বালারহাট থেকে বাঁচতে হলে আমাকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। মাওলানা সাহেব দুদিনের জন্য বাইরে কোন সফরে যাচ্ছিলেন। আমি আরো দুই দিন তার সাথে থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলাম। তিনি খুব খুশি হয়েই অনুমতি দিলেন। একদিন হরিয়ানা, এরপর দিল্লী ও খোর্যার সফর ছিল। দুদিন পর তিনি ফুলাত ফিরে এলেন। এ দুদিন আমার মন ইসলাম গ্রহণের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি ওমর ভাইকে আমার ইচ্ছার কথা বললাম। সে খুব খুশি হয়ে মাওলানা সাহেবকে জানালো।
আলহামদুলিল্লাহ ২৫ জুন ১৯৯৩ বাদ জোহর আমি ইসলাম কবুল করি। মাওলানা সাহেব আমার নাম রাখেন মুহাম্মদ আমের। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা এবং নামাজের নিয়ম কানুন ও দরকারি মসলা-মাসায়েল শেখার জন্য তিনি আমাকে কিছুদিন ফুলাত থাকার পরামর্শ দিলেন। আমি আমার স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাদের সমস্যার কথা বললে তিনি বাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন। আমি কয়েক মাস এসে থাকলাম এবং আমার স্ত্রীকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিতে থাকি। আলহামদুলিল্লাহ ৩ মাস পর আমার স্ত্রী ও মুসলমান হয়ে যায়।