বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-৬)

বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-৬)

আমি আমার মাকে আমার মুসলমান হওয়ার ব্যাপারে জানালে তিনি খুব খুশি হন এবং বলেন তোর বাপের আত্মা এতে শান্তি পাবে। আমার মা ও ওই বছরে মুসলিম হন।

বর্তমানে আমি একটি জুনিয়র হাই স্কুল চালাচ্ছি। স্কুলে ইসলামী শিক্ষার সাথে সাথে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার ও ব্যবস্থা আছে।

ওমর ভাইয়ের সাথে মিলে একত্রে আমরা প্রোগ্রাম বানিয়েছি যে আল্লাহর ঘর শহীদ করে আমরা যেই বিরাট গুনাহ করেছি তার কাফফারা হিসেবে আমরা বিরান মসজিদগুলো আবাদ করব এবং নতুন নতুন মসজিদ বানাবো। আমরা দুজনে মিলে আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নেব। আমি বিরাট মসজিদ গুলো আবাদ করব আর ওমর ভাই নতুন নতুন মসজিদ বানাতে চেষ্টা চালাবেন এবং এ ব্যাপারে মসজিদ বানাবার ও সেগুলোকে লোকে ভরপুর করবার কর্মসূচি হাতে নিলাম।

আলহামদুলিল্লাহ! ২০০৪ ইং সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত এই পাপী ১৩ টি বিরান ও অধিকৃত মসজিদ হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লী ও মিরাট সেনানিবাস এলাকায় আবাদ করেছে। এ ব্যাপারে ওমর ভাই অনেক এগিয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত সেই বৃষ্টি মসজিদ তৈরি করেছে এবং ২১ তম মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছে। আমরা উভয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবরি মসজিদের প্রত্যেক শাহাদাত বার্ষিকীতে ৬ ডিসেম্বর তারিখে একটি বিরান ও অনাবাদি মসজিদে অবশ্যই নামাজ শুরু করাতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ! আমরা এই পর্যন্ত কোন বছরেই এটা করতে ব্যর্থ হইনি। অবশ্য শ’য়ের লক্ষ পূরণ এখনো অনেক দূর। আশা করছি এ বছর এর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। আটটি মসজিদ সম্পর্কে কথাবার্তা চলছে। আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেগুলো আবাদ হয়ে যাবে। ওমর ভাই অনেক আগেই তো লক্ষ্য অর্জনে আমার চেয়ে এগিয়ে আছে। আর আসলে আমার কাজও তো তারই ভাগে পড়ে। আমাকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার মাধ্যম তো মূলত সেই।

আমি ছাড়া আমাদের পরিবারে আমার এক বড় ভাই আছেন। আমার ভাবি চার বছর আগে মারা গেছেন। ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল আমার বিয়ের পর। আর চারটি ছোট ছোট বাচ্চা আছে। একটি বাচ্চা কিছুটা প্রতিবন্ধী ধরনের। আমার ভাবি ছিলেন খুবই ভালো মহিলা। আদর্শ স্ত্রীর মতোই তিনি ভাইয়ের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন যাপন করতেন। ভাবির মৃত্যুতে দুঃখে-শোকে ভাইটা আমার পাগল প্রায় হয়ে পড়েছিলেন। ভাবির মৃত্যুর পর আমার স্ত্রী তার ছেলেমেয়েদের খুবই সেবা যত্ন করে। আমার ভাই ছিলেন খুবই শরীফ ও সজ্জন মানুষ। তুমি আমার স্ত্রীর সেবায় খুবই প্রীত হন। আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত দেই। কিন্তু আমার আচরণে আমার পিতার দুঃখ ও মন কষ্টের কারণে তিনি আমাকে ভালো মানুষ মনে করতেন না। আমি আমার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলাম, আমাদের ছেলেমেয়েরা কিছুটা বড় হয়ে গেছে। আর আমার ভাই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব বিপদে আছেন। ভালো হয় যদি আমি তোমাকে তালাক দিয়ে দিই আর ইদ্দত পালনের পর ভাই রাজি হলে মুসলমান হয়ে তোমাকে বিয়ে করে। এতে আমাদের উভয়ের জন্য নাজাতের ব্যবস্থা হতে পারে।

প্রথমে তো সে রাজি হয়নি এবং এই ধরনের প্রস্তাব তার কাছে খুবই খারাপ মনে হয়। কিন্তু আমি যখন তাকে আন্তরিকভাবেই বোঝাতে চেষ্টা করলাম তখন সে রাজি হল। এরপর আমি আমার ভাইকে বোঝালাম যে এসব অবুঝ ছেলেমেয়েদের জীবন বাঁচাবার স্বার্থে আপনি যদি মুসলমান হয়ে যান আর আমার স্ত্রীকে বিয়ে করেন তাহলে ক্ষতি কী? কেননা এমন মহিলা পাওয়া কঠিন হবে যে এসব বাচ্চাকে মায়ের স্নেহ মমতা দিয়ে লালন পালন করবে। শুরুতে তিনি এ প্রস্তাব খুব খারাপ মনে করেন যে, লোকে কী বলবে? আমি বললাম যুক্তি বুদ্ধির নিরিখে কাজটি যদি সঠিক হয় তাহলে তা মানতে ক্ষতি কী? আমাদের পরামর্শ হলো। আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম। ইদ্দত পালন শেষ হলে আমার ভাইকে কালেমা পড়িয়ে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! এখন তারা সুখে-শান্তিতে ঘর করছে। আমার ছেলেমেয়েরাও এখন সেখানে একসাথেই থাকে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *