বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-১)

বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-১)

হরিয়ানা প্রদেশের পানিপথ জেলার একটি গ্রামে আমার অধিবাস। ১৯৭০ সালের ৬ ডিসেম্বর এক রাজপুত পরিবারে আমার জন্ম। আমার পিতা একজন কৃষক পাশাপাশি একটি প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টারও ছিলেন। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন এবং মানুষকে ভালোবাসা তার ধর্ম ছিল। কারো উপর জুলুম নিপীড়ন তিনি কখনোই পছন্দ করতেন না। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময়কার হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তিনি নিজ চোখে দেখেছিলেন। সেই ঘটনা তিনি মর্ম বেদনার সঙ্গে আলোচনা করতেন এবং সে সময়কার ব্যাপক মুসলিম হত্যাকে দেশের জন্য বড় কলঙ্ক মনে করতেন। অবশিষ্ট মুসলিমদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে তিনি অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি তার স্কুলে মুসলমান ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখতেন। জন্মসূত্রে আমার নাম বলবীর সিং। মেট্রিক পাশ করে পানিপথে গিয়ে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হই। পানিপথ ছিল শিবসেনার সবচেয়ে মজবুত কেন্দ্র। ওখানে অনেক শিব সৈনিকের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং আমিও পানিপথ শাখায় আমার নাম লেখাই।

পানিপথের ইতিহাস তুলে ধরে সেখানকার যুবকদের মধ্যে মুসলমানদের বিশেষ করে সম্রাট বাবর ও অন্যান্য মুসলিম সম্রাটদের বিরুদ্ধে বিরাট ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হতো। আমার পিতা যখন জানতে পারলেন আমি শিবসেনার সদস্য হয়েছি তখন তিনি আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন। ইংরেজরা ইতিহাস বিকৃত করে হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে লড়াই বাধাবার এবং দেশকে দুর্বল করার জন্য সৃষ্টি করেছিল। দেশ বিভাগের সময়কার ঘটনা শুনিয়ে শিবসেনার যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি পিতার কোন কথায় কর্ণপাত করিনি।

১৯৯০ সালে লাল কৃষ্ণ আদভানিজির রথ যাত্রায় আমাকে পানিপথের কর্মসূচি সফল করার ক্ষেত্রে বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। রথ যাত্রায় ওই সব দায়িত্বশীল নেত্রীবর্গ আমাদের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের আগুন জ্বালিয়ে দেন। আমি শিবাজীর নামে শপথ গ্রহণ করি যে, যাই ঘটুক না কেন আর কেউ কিছু করুক আর নাই করুক আমি একাই গিয়ে রাম মন্দিরের ওপর থেকে জুলুম করে চাপিয়ে দেওয়া মসজিদের অবকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবই।

আমার কর্মতৎপরতার কারণে আমাকে শিবসেনার যুব শাখার সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আমি আমার যুব টিম নিয়ে ৩০ অক্টোবর অযোধ্যায় যাই। পথিমধ্যে পুলিশ আমাদের ফয়েজাবাদে থামিয়ে দেয়। এরপরেও আমি এবং আমার কিছু সাথী কোন প্রকার গা বাঁচিয়ে অযোধ্যায় গিয়ে পৌঁছাই। বহু চেষ্টা করেও আমি বাবরি মসজিদের কাছে পৌঁছতে পারলাম না। এর ফলে আমার শরীরে ঘৃণা ও বিদ্বেষের আগুন আবারও জ্বলে ওঠে।

আমি আমার সাথীদেরকে বারবার বলছিলাম এরকম জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। রামের জন্মভূমিতে আরব লুটেরাদের কারণে রাম ভক্তদের উপর গুলি চলবে, এ কেমন অন্যায় ও জুলুম! আমার খুব রাগ হচ্ছিল। আমি রাগে ক্ষোভে ফুসছিলাম। কখনো মনে হচ্ছিল যে আমি নিজেকেই শেষ করে দেই। আত্মহত্যা করি। সারাদেশে ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামা চলছিল। আমি সেদিনের জন্য খুবই অস্থির ছিলাম যেন আমার সুযোগ মিলে যায় আর আমি নিজ হাতে বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেই।

এভাবে একদিন দুইদিন করে সেই অপেক্ষার দিনটি ও কাছে এসে পড়ল, যে দিনটাকে আমি সে সময় খুশির দিন, আনন্দের দিন ভাবতাম। আমি আমার কিছু আবেগ দীপ্ত সাথীকে নিয়ে ১৯৯২ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথমে অযোধ্যা যাই। আমার সাথীদের মধ্যে পানিপথের নিকটবর্তী যাদের একটি গ্রামের যোগিন্দর পাল নামক এক যুবকও ছিল। সে ছিল আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার পিতা ছিল একজন বিরাট জমিদার। জমিদার হলেও তিনি মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি তার একমাত্র পুত্রকে অযোধ্যা যেতে বাধা দেন। তার বড় চাচাও তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সে কারোর বাধা মানেনি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *